ডেস্ক: ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ঢাকার ১ হাজার ২০৯টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ৭২৯টি প্রতিষ্ঠানকে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ৬০২টি ও অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবন পেয়েছে ১২৭টি। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এই হিসাব ধরলে ঢাকার ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। একইভাবে প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশের ৫ হাজার ৩৭৪টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ২ হাজার ১১৮টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৬৯৪টি প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ ও ৪২৪টি প্রতিষ্ঠান অতি অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ। ফায়ার সার্ভিসের এক প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের মার্কেট, সুপার মার্কেট ও শপিং মল ভবনের পরিদর্শনের এক জরিপ থেকে জানা গেছে, সংস্থাটি ৫৮টি মার্কেট পরিদর্শন করে ৯টিকে অতিঝুঁকিপূর্ণ, ১৪টি মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৩৫টি ভবনকে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে ৯টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের মধ্যে রয়েছে, নিউ মার্কেট রোডের গাউছিয়া মার্কেট, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ার বরিশাল প্লাজা, রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপারমার্কেট, চকবাজারের আলাউদ্দিন মার্কেট, শাকিল আনোয়ার টাওয়ার, শহিদুল্লাহ মার্কেট, সদরঘাটের শরীফ মার্কেট, মায়া কাটারা (২২ মার্কেট) ও সিদ্দিকবাজারের রোজনীল ভিস্তা। মাঝারি ধরনের অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে জুরাইনের আলম সুপারমার্কেট, খিলগাঁওয়ের উত্তরা মার্কেট, ডেমরার সালেহা শপিং কমপ্লেক্স, মনু মোল্লা শপিং কমপ্লেক্স, দোহারের জয়পাড়ার লন্ডন প্লাজা শপিংমল, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিটের এ কে ফেমাস টাওয়ার, রোজভ্যালি শপিংমল, নিউ মার্কেটের মেহের প্লাজা, মিরপুর রোডের প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, নিউ চিশতিয়া মার্কেট, নেহার ভবন, এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্স, ইসমাইল ম্যানশন সুপারমার্কেট, সুবাস্তু এরোমা শপিংমল।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে বুড়িগঙ্গা সেতু মার্কেট, খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেট, খিলগাঁও সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার মার্কেট, তিলপাপাড়া মিনার মসজিদ মার্কেট, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের হাজী হোসেন প্লাজা, ডেমরা সারুলিয়ার ইসলাম প্লাজা, ডেমরা কোনাপাড়ার নিউমার্কেট, ঢাকা দোহারের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, দোহারের এ হাকিম কমপ্লেক্স, নবাবগঞ্জের শরীফ কমপ্লেক্স, কাফরুলের বাচ্চু মিয়া কমপ্লেক্স, কাফরুলের ড্রিমওয়্যার, মিরপুরের এশিয়ান শপিং কমপ্লেক্স, মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট, মিরপুরের ফেয়ার প্লাজা, তেজগাঁওয়ের শেপাল এন্টারপ্রাইজ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড, নাসা মেইনল্যান্ড, দীন মোহাম্মদ রোডের জাকারিয়া ম্যানশন, লালবাগের হাজী আব্দুল মালেক ম্যানশন, ওয়ারীর ইপিলিয়ন হোল্ডিং লিমিটেড, মিরপুরের গ্লোব শপিং সেন্টার, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, চাঁদনী চক মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, হযরত বাকু শাহ হকার্স মার্কেট, ইসলামিয়া বই মার্কেট, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-১, হান্নান ম্যানশন, সিটি প্লাজা ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২, নগর প্লাজা, রোজ মেরিনাস মার্কেট ও দুকু টাওয়ার।
ফায়ার সার্ভিস গত বছরের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশে আগুন লাগার বড় কারণ বৈদ্যুতিক গোলযোগ। ২০২২ সালের অগ্নিদুর্ঘটনার ৩৮ শতাংশই হয়েছে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে। দ্বিতীয় বড় কারণ বিড়ি ও সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা। এজন্য ২০২২ সালে ১৬ শতাংশের কিছু বেশি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ১৪ শতাংশ অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে চুলা থেকে। সেটি বৈদ্যুতিক, গ্যাস বা মাটির চুলা হতে পারে। ৩ শতাংশের কিছু বেশি আগুনের ঘটনা ঘটেছে গ্যাস সরবরাহ লাইন থেকে। বহুতল ভবনের খাবারের দোকানে গ্যাসের চুলা থাকে। সেখানে অরক্ষিতভাবে রাখা হয় বিভিন্ন সিলিন্ডার। সে কারণে পুরো ভবন অরক্ষিত হয়ে যায়। বেশির ভাগ মার্কেট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা থাকে। সংস্থাটি জানায়, ভবন তৈরি করার সময় অবশ্যই বিল্ডিং কোড মানতে হবে। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। ভবনের সিঁড়ি ও দোকানের সামনে মালপত্র স্তূপ করে রাখা যাবে না। আর মার্কেটের ভেতরে কোনো ধরনের ধূমপান করা যাবে না।