নিজস্ব প্রতিবেদক
গাজীপুরের ভাওয়াল রেলস্টেশনের কাছে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রেলপথে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। এ ঘটনায় একজন যাত্রী নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত সোয়া ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও গাজীপুর জেলা প্রশাসন থেকে পৃথক কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অবরোধ ডাকা দল বিএনপির পক্ষ থেকে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে জড়িতদের শাস্তি দাবি করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অবরোধের আগের দিন ও অবরোধকালীন অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে ভাঙচুরের নানা ঘটনা গত দেড় মাস ধরে বিএনপি করছে। যেহেতু ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে, সেটির লাইন কেটে ফেলার ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত থাকার আন্দাজ করতে খুব বেগ পেতে হয় না। তবে তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা অবশ্যই জনগনকে জানানো উচিত।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিএনপি ও সমমনাদের অবরোধের প্রাক্কালে গাজীপুরের ভাওয়ালে রেললাইন কেটে ফেলায় ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় ৬০০ ফুট রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সাত সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিভাগীয় সংকেত টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী সৌমিক সাওন কবিরকে। এই কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
নিহত ব্যক্তি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রওহা গ্রামের আসলাম হোসেন (৩৫)। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মুহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেন, নাশকতা সৃষ্টির জন্য দুর্বৃত্তরা রেলপথের একটি অংশ কেটে রেখেছিল। ট্রেনটি ওই স্থানে পৌঁছালে ইঞ্জিন ও চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
এদিকে বুধবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘ভাওয়াল রেলস্টেশনে সংঘটিত ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুতের ঘটনা নিঃসন্দেহে নাশকতামূলক কাজ। আমি এই ঘটনায় ধিক্কার ও নিন্দা জানাই। যে বা যারা এ ধরনের অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা মানবতার শত্রু। নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করছি।’ তিনি বলেন, ‘দু-একটি গণমাধ্যম ট্রেনের এই বগিচ্যুতের ঘটনায় গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরত দলগুলোর ওপর দোষ চাপানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা গভীর চক্রান্তমূলক। এতেই প্রমাণিত হয় এবং জনগণ বিশ্বাস করে যে সুপরিকল্পিতভাবেই এই ধরনের নাশকতা ঘটানো হয়েছে।’
বিএনপি যতই দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করুক, তাদের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া এধরনের নাশকতা কারা করতে চাইবে প্রশ্ন করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাসবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘সরকারকে যদি ঈঙ্গিত করে বিএনপি দায় এড়াতে চায় সেটা হাস্যকর হবে। কেননা, নির্বাচনের এই বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে এধরনের দুর্ঘটনা পাগলেও ঘটাতে চাইবে না। বরং সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য বিরোধীদল চাইবে জনগণের ইমোশন নিয়ে খেলতে। এই ট্রেনলাইন কাটার কারণে এর চেয়েও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। ফলে এটা অবরোধকারীদের কাজ সন্দেহ নেই। তবে তারপরেও ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।