কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের জনপ্রিয় মিষ্টান্নের নাম ‘মুরালি’। জিভে জল এনে দেয় ১২ ইঞ্চি লম্বা সুস্বাদু মুরালি। কদর রয়েছে দেশ-বিদেশে। অনেক বছর ধরে অষ্টগ্রামে তৈরি হয়ে আসছে সুস্বাদু এ মিষ্টান্ন। যারা হাওরে ঘুরতে আসেন বা কোনো কাজে আসেন একবার হলেও মুরালির স্বাদ নিতে ভোলেন না তারা।
ধারণা করা হয়, মুরোলি থেকে মুরালির শব্দের উৎপত্তি। তবে কবে থেকে এ হাওরাঞ্চলে মুরালি তৈরি শুরু হয়েছে তা ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা বলতে পারেন না। সুস্বাদু মুরালি খেতে কিশোরগঞ্জসহ আশপাশের জেলা থেকেও ছুটে আসেন লোকজন। এরইমধ্যে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরেও।
তবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় আগের মতো এত বেশি মুরালি তৈরি হয় না। আগে বেশ কয়েকটি মুরালি তৈরির দোকান থাকলেও এখন ঠিকে আছে মাত্র একটি। এখন এই একটি দোকানেও ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না।
মুরালি তৈরির কারিগর শাহেদ জানান, প্রথমে লবণ, তেল, পানি ও ময়দা মেখে খামির করা হয়। এরপর খামির বেলে বড় মোটা রুটির মতো বানিয়ে ছুরি দিয়ে ১২-১৪ ইঞ্চি করে কাটা হয়। এরপর কড়াইয়ে সয়াবিন তেল দিয়ে সেগুলো ভেজে রাখা হয়। পরে গুড় জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় সিরা। মুরালির ভাজা টুকরাগুলোকে কড়াই থেকে তুলে বড় পাত্রে ভাজ করে রাখা হয়। পরে মুরালির ওপর গুড়ের গরম সিরা ঢালা হয়। সিরা ঢালা শেষে মুরালিগুলোকে১৫-২০ মিনিট বড় চামচ বা হাতল দিয়ে নাড়তে হয়। ভালোভাবে সিরা মেশানো হলে কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা করলে তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু মুরালি। প্রতিকেজি মুরালি ১৬০-২০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয়।
মুরালির দোকানের মালিক সালাউদ্দিন বলেন, এটা আমাদের ইকরদিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার। এখান থেকে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কিনে নিয়ে যান। প্রবাসীরাও বিদেশে নিয়ে যান মুরালি।
তিনি বলেন, গুড়, তেল ও ময়দার দাম বাড়ার কারণে মুরালি কম তৈরি করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে মুরালির দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় চাহিদা একটু কমে গেছে। আগে যেই ব্যক্তি দুই কেজি কিনতেন সেই লোক এখন কিনছেন এক কেজি। আগে দিনে৪-৫ মণ বিক্রি করতে পারলেও এখন এক দুই মণের বেশি হচ্ছে না।