নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার। এমনিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে ক্ষমতাসীনদের উপর। তাই দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগে সমূলে উৎপাটন করতে চেয়েছে দলীয় কোন্দল। চেষ্টা চলছে, আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে যাতে দলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেওয়া যায়। লক্ষ্য একটাই, শান্তিপূর্ণ-অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।
যদিও ভোট নিয়ে যথেষ্ট দোলাচলে রয়েছে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল। তার মাঝেই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ অর্থাৎ নির্বাচন হচ্ছে দেশের সংবিধান অনুযায়ী। বিএনপি তফসিল প্রত্যাখ্যান করলেও কোন লাভ হয়নি। অবরোধ হরতালের মতো কর্মসূচি গুলো চালালেও সেগুলো চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হতে চলেছে। বিএনপি এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না তার কোন সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। লাগাতার অবরোধ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আপাতত বিএনপির সামনে দাঁড়িয়েছে বেশ কয়েকটা চ্যালেঞ্জ। কারণ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আর বেশি বাকি নেই। এই সময়ের মধ্যেই বিএনপি নেতা কর্মীদের দলত্যাগ রোধ একটা বড় চ্যালেঞ্জের সমান।’
চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন করা না হলে শেষমেষ ব্যর্থ হবে সব আন্দোলন। ইতিমধ্যেই দলটার বহু শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, ৩০শে নভেম্বরের পর হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা উচিত। কারণ দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া একটা দলের পক্ষে খুব একটা সহজ নয়। বিক্ষোভ নাকি গুরুত্বপূর্ণ ভবন কর্মসূচি পালন করবে, আপাতত সেটাই নিয়ে ভাবছে বিএনপি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। ২৯৮টি আসলে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে।সেই তালিকায় দেখা যাচ্ছে বর্তমান সরকারের প্রায় ৭১ জন সংসদ সদস্য এবার মনোনয়ন পাননি। অথচ তারা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। বোঝাই যাচ্ছে, মনোনয়নের ক্ষেত্রে বেশ ভালো রকম কাটছাঁট করেছে আওয়ামী লীগ। প্রার্থী বাছাই করেছে অত্যন্ত সাবধানে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, “নির্বাচনকে সামনে রেখে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের অনেক কিছু বিষয় লক্ষ্য করেই দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয়দের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখানে নতুন পুরানো বলতে কিছু নেই। অধিকতর গ্রহণযোগ্যরাই মনোনয়ন পেয়েছেন।”
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকা থেকে সবচেয়ে বেশি ১৬ জন সংসদ সদস্য বাদ পড়েছেন ঢাকা বিভাগে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ জন বাদ পড়েছেন খুলনা বিভাগে। রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন করে, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ জন, রংপুর ও সিলেট বিভাগে ৬ জন করে এবং বরিশাল বিভাগে বাদ পড়েছেন মোট তিনজন সংসদ সদস্য।
প্রথমবারের মতো নৌকা পেয়েছেন: পঞ্চগড়-১ আসনে নাইমুজ্জামান ভুইয়া, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মো.মাজহারুল ইসলাম, নীলফামারী-৪ আসনে জাকির হোসেন বাবুল, লালমনিরহাট-৩ আসনে মো.মতিয়ার রহমান রংপুর-৫ আসনে রাশেক রহমান, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিপ্লব হাসান, গাইবান্ধা-১ আসনে আফরোজা বারী।
রাজশাহী বিভাগে বগুড়া-২ আসনে তৌহিদুর রহমান মানিক, বগুড়া-৩ আসনে সিরাজুল ইসলাম খান, বগুড়া-৪ আসনে হেলাল উদ্দিন কবিরাজ, রাজশাহী-২ আসনে মোহাম্মদ আলী, রাজশাহী-৩ আসনে আসাদুজ্জামান আসাদ রাজশাহী-৪ আসনে আবুল কালাম আজাদ, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে শফিকুল ইসলাম, পাবনা-৪ আসনে গালিবুর রহমান শরীফ এর আগে কখনও মনোনয়ন পাননি।
খুলনা বিভাগে মেহেরপুর-২ আসনে আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক, ঝিনাইদহ-৩ আসনের সালাউদ্দিন মিরাজী, যশোর-২ আসনে তৌহিদুজ্জামান, যশোর-৪ আসনে এনামুল হক বাবু, মাগুরা-১ আসনে সাকিব আল হাসান, বাগেরহাট-৪ আসনে বদিউজ্জামাল সোহাগ, খুলনা-৩ আসনে এস এম কামাল হোসেন, খুলনা-৬ আসনে মো. রশীদুজ্জামান, সাতক্ষীরা-১ আসনে ফিরোজ আহমেদ স্বপন, সাতক্ষীরা-২ আসনে মো. আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা-৪ আসনে এসএম আতাউল হকও একবারেই নতুন।
বরিশাল বিভাগে বরগুনা-২ আসনে সুলতানা নাদিরা, বরিশাল-৩ আসনে সরদার মো. খালেদ হোসাইন, বরিশাল-৪ শাম্মী আহমদ, বরিশাল-৬ আসনে আব্দুল হাফিজ মল্লিক, পিরোজপুর-৩ আসনে মো. আশরাফুর রহমানও এর আগে কখনও মনোনয়ন পাননি।
ঢাকা বিভাগের মধ্যে রাজধানীর ঢাকা-৫ আসনের হারুনুর রশিদ মুন্না, ঢাকা-৬ আসনে সাঈদ খোকন, ঢাকা-৭ আসনের সোলাইমান সেলিম, ঢাকা-১০ আসনের ফেরদৌস আহমেদ, ঢাকা-১১ আসনের মো. ওয়াকিল উদ্দিন ও ঢাকা-১৪ আসনে মাইনুল হোসেন খান নিখিলও এর আগে কখনও মনোনয়ন পাননি।
বিভাগের অন্য জেলাগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইল-৩ আসনে কামরুল হাসান খান, টাঙ্গাইল-৪ আসনে মো.মাজহারুল ইসলাম তালুকদার টাঙ্গাইল-৫ আসনে মো.মামুন অর রশিদ, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে আব্দুর কাহার আকন্দ ৪৩, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মহিউদ্দিন আহমেদ গাজীপুর-৩ আসনে রুমানা আলী, নরসিংদী-৩ ফজলে রাব্বী খান ও ফরিদপুর-৩ আসনে শামীম হক প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের মধ্যে জামালপুর-৪ আসনে মাহবুবুর রহমান, জামালপুর-৫ আসনে আবুল কালাম আজাদ, শেরপুর-৩ আসনে শহিদুল ইসলাম ৩৯) ময়মনসিংহ-৩ আসনে নিলুফা আনজুম, ময়মনসিংহ-৪ আসনে মোহাম্মদ মোহিত উর রহমান, ময়মনসিংহ-৫ আসনে আব্দুল হাই আকন্দ, নেত্রকোণা-৫ আসনে আহমদ হোসেন এর আগে কখনও দলীয় টিকেট পাননি।
সিলেট বিভাগে সুনামগঞ্জ-১ আসনের রনজিত চন্দ্র সরকার সুনামগঞ্জ-২ আসনের চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের মো. সাদিক, মৌলভীবাজার-২ আসনের শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মৌলভীবাজার-৩ আসনের মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, হবিগঞ্জ-১ আসনের মো. মুশফিক হোসেন চৌধুরী এবং হবিগঞ্জ-২ ময়েজ উদ্দিন শরিফও নতুন মুখ।
চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন মুখের মধ্যে আছেন কুমিল্লা-১ আসনের আব্দুস সবুর ৬২) কুমিল্লা-৮ আসনের আবু জাফর মো. শফিউদ্দিন, চাঁদপুর-১ আসনের সেলিম মাহমুদ, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের ফরিদুন্নাহার লাইলী, চট্টগ্রাম-১ আসনের মাহবুব উর রহমান চট্টগ্রাম-২ আসনের খাদিজাতুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম-৪ আসনের এসএম আল মামুন ও চট্টগ্রাম-১২ আসনের মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীও এবারই প্রথমবারের মতো নৌকা পেয়েছেন।
ফিরলেন যারা: আগের নির্বাচনে দলের মনোনয়নের তালিকা থেকে বাদ পড়ে মন ভেঙেছিল যাদের এমন অনেকেই এবার মনোনয়ন পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এছাড়া সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের লড়াইয়ে নামতে দলের প্রতীক নৌকা ফিরে পেয়েছেন। যুবলীগের সাবেক নেতা চয়ন ইসলাম সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে বাদ পড়েন। সেই আসনে ২০১৮ সালে তার বোন মেরিনা জাহান কবিতাকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবার বোনকে বাদ দিয়ে আবারও মনোনয়ন পেলেন ভাই। অন্যদের মধ্যে ময়মনসিংহ-৯ আসনে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকেটে এমপি হন আব্দুস সালাম। পরের দুই নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পান আনোয়ারুল আবেদীন খান। আগামী নির্বাচনে সেখানে আবারও সালামকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ।