আগুন এ যেন এক ভয়াবহ আতঙ্কের নাম। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটে যাচ্ছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। অগ্নিকাণ্ডে নিমিষেই ছাই হয়ে যায় তিল তিল করে গড়ে তোলা অনেক মূল্যবান সম্পত্তি। সেই সঙ্গে ঘটে প্রাণহানি। চোখের সামনে জলজ্যান্ত প্রাণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পুড়ে যায় বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আগুন লাগার বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
যেকোনো অগ্নিকাণ্ডে আগুনে পুড়ে যতটা মৃত্যু হয়, তার চেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ধোঁয়ার কারণে শ্বাস বন্ধ হয়ে। এই যেমন গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডে একটি বাণ্যিজিক ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। সেখানে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ছিল। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নেয় ৪৫টি তাজা প্রাণ। যাদের বেশিরভাগেই ওই সব রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিল। দুই ঘণ্টার ব্যবধানে একটি জাকজমক পূর্ণ বিল্ডিং পরিণত হয় মৃত্যুর মিছিলে।
অনেক সময় দেখা যায় আমাদের অবহেলার কারণে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। তবে বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বৈদ্যুতিক ত্রুটি কিংবা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে। তাই অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে এখন সবার আগে যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো আমাদের সচেতনতা।
কোথাও আগুন লাগলে প্রথমেই সেখান থেকে নিরাপদ দূরত্বে যেতে চেষ্টা করুন। রেস্টুরেন্ট, শপিং মল বা এমন কোনো জায়গায় যদি থাকেন যেখানে ইমারজেন্সি ডোর রয়েছে তাহলে সেই দরজা দিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করুন। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামুন। ভুলেও লিফট ব্যবহার করবেন না।
আতঙ্কিত হওয়া চলবে না
আগুন লাগলে ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক। তবে এই ভয়ই মৃত্যুর কারণ হতে পারে। কারণ আতঙ্কিত হয়ে গেলে মাথা ঠিকমতো কাজ করে না, হার্টবিট বেড়ে যায়। যা থেকে হার্টফেল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে ভয় পেয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার ফলে আগুন থেকে বর্জিত নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড আমাদের নিশ্বাসে অতিরিক্ত মাত্রায় মিশে যায়। যা থেকে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ধোঁয়া থেকে দূরে যান
যতটা সম্ভব ধোঁয়া থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করুন। আগুনের ধোঁয়া থেকে নির্গত নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড গ্যাস বিষাক্ত। এটি চোখে মুখে গেলে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে যাদের শ্বাস কষ্টের সমস্যা আছে তাদের শ্বাসরোধ পর্যন্ত হতে পারে এইসময়।
রুম বন্ধ
রুমের দরজা বন্ধ করে দিন। দরজার নিচে ও উপরে কাপড় ভিজিয়ে তা দিয়ে দরজার ফাঁকা অংশ বন্ধ করুন। এতে আগুনের ধোঁয়া রুমে সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। রুমে যদি তক্তপোষ থাকে তাহলে তা দিয়ে দরজা কভার করে দেবেন। এতে আগুনের বিষাক্ত ধোঁয়া সহজে ঢুকতে পারবে না।
হামাগুড়ি দিন
বের হওয়ার কোনো পথ পেলে হামাগুড়ি দিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করুন। এতে মেঝের সতেজ বাতাস আপনাকে শ্বাস নিতে সাহায্য করবে। দরজা খোলার আগে হাত দিয়ে তা ধরে দেখুন। গরম লাগলে খুলবেন না। বুঝবেন দরজার ওপাশে আগুন আছে।
ভেজা কাপড়ে মুখ ঢাকুন
একটি কাপড় বা তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন। নাক দিয়ে শুধু নিঃশ্বাস নিন। মুখ দিয়ে শ্বাস নেবেন না। প্রয়োজনে তোয়ালে দাঁত ও ঠোঁট দিয়ে চেপে রাখুন। এটি আপনাকে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে সাহায্য করবে।
জানালা খুলে দিন
ধোঁয়া দেখা গেলে জানালা ভেঙ্গে দেবেন না। বরং তখন জানলার পর্দা সরিয়ে দেবেন যাতে তাতে আগুন না লাগে। আর যদি দেখেন জানালার দিকে আগুন বা ধোঁয়া নেই তাহলে তা খুলে তাজা বাতাস নেওয়ার চেষ্টা করুন শ্বাস নেওয়ার জন্য।
মন শক্ত করুন
কষ্ট হলেও সাহায্যের জন্য কেউ আসা অব্দি মন শক্ত করে আগুন থেকে বাঁচতে চেষ্টা করুন। অনেক মানুষ আগুনের থেকে বাঁচতে বহুতল বিল্ডিং’এর উপর থেকে ঝাঁপ দেন ভয়ে। মারা যান এটা না জেনেই যে আর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করলেই সাহায্য পেতেন।
আপনার কাপড়ে যদি আগুন লেগে যায়
এমন পরিস্থিতিতে সঙ্গে সঙ্গে মেঝেতে শুয়ে পরুন। এবার মেঝেতে সারা শরীর গড়াগড়ি করতে থাকুন যতক্ষণ না আগুন নিভে যায়। এরকম করলে আগুন জলদি নিভে যাবে।গড়াগড়ি খাওয়ার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেবেন যেন আগুনের আভা মুখে এসে না লাগে। আগুন লাগলে লাফালাফি করবেন না। এতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে যায়।