নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা চতুর্থ দফায় দুদিনের অবরোধের প্রথম দিনে রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বেশিরভাগ গণপরিবহন। এছাড়া সকাল থেকে দেখা যায়নি যাত্রীদেরও তেমন আনাগোনা। তবে রাজধানীর ভেতরের জনজীবন অনেকটা স্বাভাবিক ছিলো। রাস্তায় দিনের কাজ করতে বের হওয়া মানুষজন বলছে, অবরোধর আগের দিন রাতে বাস পুড়িয়ে ভীতি সঞ্চার করা হচ্ছে। এই ভয় দেখিয়ে অবরোধ করে জনগনকে পাশে পাচ্ছে মনে করলেও আসলে সমর্থন হারাচ্ছে বিএনপি।
২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের পর চলমান হরতাল ও অবরোধে গত ২৯ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ দিনে ঢাকা মহানগর এলাকায় ৬৪টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এসব ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন গতকাল শুক্রবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে শনিবার (১১ নভেম্বর) রাত ৮টা ২০ মিনিটে আরামবাগ পুলিশ বক্সের পাশে, সাড়ে ৮টার দিকে গাবতলীর বাস স্ট্যান্ডের সামনে, রাত ৯টার দিকে গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের সামনে এবং রাত সাড়ে ৯টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফল-পট্টির সামনে বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর রাতে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রবিবার সকালে বাস টার্মিনালে দেখা যায়, যারা জরুরি প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে টার্মিনালে এসেছেন, তারাও আতঙ্ক মাথায় নিয়েই অপেক্ষা করছেন বাসের। যদিও কাউন্টারের পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, যাত্রী সংখ্যা একেবারেই নগন্য, তাই বাস ছাড়া যাচ্ছে না। গাবতলী টার্মিনাল থেকে একটি বাসও দুপুর পর্যন্ত ছেড়ে যায়নি। বেশিরভাগ বাস কাউন্টারই ছিল বন্ধ। এছাড়া যারা কাউন্টার খুলে রেখেছেন, তারাও যাত্রী সংকটে অলস সময় পার করছেন। যাত্রী না থাকায় কাউন্টার খোলা রেখে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করছেন কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা। আগের রাতে বাস পুড়িয়ে ভয় দেখানোর কারণেই যাত্রীরা আসতে সাহস করছে না বলে মনে করেন তারা।
সকাল থেকে কয়েকভাগে রিক্সা বদল করে কাজের জায়গায় পৌঁছান খন্দকার শাকিব। তিনি বলেন, কোথাও কোন অবরোধের লেশ নেই। দুরপাল্লার যোগাযোগ সম্পন্ন হচ্ছে না। কিন্তু মানুষের মধ্যে এ কর্মসূচি নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই। তাহলে বারবার একই কর্মসূচি ডেকে তারা কী বুঝাতে চাচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য না।
বিদেশ থেকে এসে কুমিল্লা যাবেন রবিউল আলমের পরিবার। তারা রাস্তার পরিস্থিতি কী হবে বুঝতে না পেরে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রওনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঢাকায় হোটেলে থেকে অবরোধ শেষ হলে যাবেন এমন সিদ্ধান্তও নিতে পারছেন না। কেননা আদৌ অবরোধ নামে এই কর্মসূচি শেষ হবে কিনা তাকে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
আগুন লাগানোর বিষয়টি কীভাবে ঘটছে জানাতে গিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতকারীরা অনেকটা ফাঁকা বাসে যাত্রীবেশে উঠে এবং তারা পিছনের দিকে ফাঁকা সিটে বসে পড়েন। পরে সময়-সুযোগ বুঝে গাড়িতে আগুন দিয়ে নেমে যায়। গাড়ির পেছন থেকে খুব দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পরে এমন ধরনের দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে তারা। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিভিন্ন এলাকা থেকে। ঐ সময় তাদের কাছ থেকে পেট্রোল, গান পাউডার, তুলা, পুরোনো কাপড় ইত্যাদি জব্দ করা হয়েছে।