আন্দোলন সফলে ঢাকা মহানগর বিএনপি ব্যর্থ’- গত দেড় দশকের পুরনো কথা এটি। সম্প্রতি এই আলোচনা আবারও চাউর হয়েছে। ফলে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন নেতৃত্ব ঠিক করার চাপও বেড়েছে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে প্রাথমিক প্রক্রিয়াও। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আন্দোলনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির পারফরমেন্সেও অসন্তুষ্ট হাইকমান্ডসহ দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী। দলটির দায়িত্বশীল অনেক নেতা মনে করেন, রাজধানী ঢাকার রাজপথে এই দুটি সংগঠন প্রত্যাশিত পারফরমেন্স দেখাতে না পারায় ২০১৪ সালের মতো সর্বশেষ আন্দোলনও চূড়ান্ত সফলতা পায়নি। অবশ্য পুরো আন্দোলনজুড়ে মূল নেতৃত্বকে পায়নি উত্তর বিএনপি।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান গত ১০ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। আমান কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। ফরহাদ হালিম ডোনার হঠাৎ নেতৃত্বে আসায় আন্দোলনে ঠিকভাবে সমন্বয় করতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে আন্দোলন পরিচালনায় তার চোখে কিছু অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়ে। যেটা তিনি পরে দলের হাইকমান্ডকে অবহিত করেন।
এছাড়া বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে গত ২ নভেম্বর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হককে গুলশান-২ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর তার বিরুদ্ধে একে একে ১২টি মামলা দায়ের করা হয়। নির্বাচনের পর গত ৯ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পান তিনি।
অন্যদিকে গত ২৯ অক্টোবর বিএনপির চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন শুরুর পর থেকে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালামের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। আন্দোলনজুড়ে তিনি কোথায় ছিলেন, নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট কেউ জানত না এমন আলোচনা আছে। নির্বাচনের পরেও দীর্ঘদিন তার কোনো খোঁজ ছিল না। তবে এমন আলোচনাও আছে, বিভিন্ন মাধ্যমে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি ও বিভিন্ন থানার সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছিলেন। সবমিলে তাকে ঘিরে দুই ধরনের মত আছে দলটিতে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে সালামের ব্যাপারে অসন্তুষ্টি যেমন রয়েছে, তেমনি অধিকাংশ নেতা আটক হওয়ার পরেও তিনি আত্মগোপনে থাকতে পারায় অনেকে বাহাবাও দিচ্ছেন।
এদিকে মূল আন্দোলন শুরু হওয়ার আগেই গত বছর ২২ মে দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু গ্রেপ্তার হন। তাই আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য আলোচনায় আছেন যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবিন।
ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে তানভীর আহমেদ রবিনের উপস্থিতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম খুব গতিশীলই ছিল। তার গ্রেপ্তারের পরে আর তেমন কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি। বর্তমান বিধ্বস্ত অবস্থাতেও রবিন কারামুক্ত হয়েই গ্রেপ্তার ও আহত নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন।
সূত্রমতে, আন্দোলনের ব্যর্থতার পরে কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ দুটি শাখার নেতৃত্ব ঢেলে সাজানোর চাপে আছেন বিএনপির হাইকমান্ড। নেতাকর্মীদের বক্তব্য হচ্ছে সত্যিকার অর্থে আন্দোলন সফলের উপযোগী একটি কমিটি গঠন করা উচিত। যা হবে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি, ভোলা বা নোয়খালী সমিতি নয়। নেতাকর্মীদের চাপে ওই দুই কমিটি গঠন নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলা শুরু করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সঙ্গত কারণে নতুন কমিটিতে কারা আসতে পারে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আছে সরগরম আলোচনা।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি সভাপতি পদের জন্য আলোচনায় আছেন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সাবেক ভারপাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম নকী। আর সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য যুবদল সহসভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এজিএম সামসুল হক, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিন প্রমুখ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই পদের জন্যই আলোচনায় আছেন বর্তমান সদস্য সচিব আমিনুল হক। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন, আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদ ও হাবিবুর রশিদ হাবিব। আর সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবিন, লিটন মাহমুদ ও বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন আছেন আলোচনায়। এদিকে সর্বশেষ আন্দোলনে অসামান্য অবদানের জন্য দুই মহানগরের শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় আছেন, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল। তবে আন্দোলনে দক্ষিণ অংশের সমন্বয়ের জন্য এই ইউনিটের সভাপতি পদে আসছেন এই আলোচনায়ই এখন দলের সর্বপর্যায়ে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে আগস্টে ঢাকা মহানগর উত্তরের জন্য আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক এবং আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে ৪৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণে আবদুস সালামকে আহ্বায়ক এবং রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করে ৪৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।