অধ্যাপক ড. মো. মোতাহার হোসেন
কৃষিবান্ধব নীতি-কৌশল প্রণয়ন ও অঙ্গীকারের জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের খ্যাতি যেমন সুবিদিত, তেমনিভাবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের দক্ষতা ও প্রতিপালনের আন্তরিকতা সন্দেহাতীত। বঙ্গবন্ধুর কৃষি ভাবনা প্রসূত নীতি ও দর্শন কৃষিতে আজকের পরিকল্পনা ও রূপরেখার অন্যতম মাপকাঠি।
বঙ্গবন্ধু কৃষির যে ভিত তৈরি করেছিলেন তার উপর দাঁড়িয়ে আছে দেশের পুরো কৃষি খাত। সে কারণেই গত দেড় দশকে বাংলাদেশের কৃষি খাত অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে দেশের প্রধান খাদ্য শস্য ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে। চাল উৎপাদনে দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ-এ কথা কারো অজানা নয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সূত্রে, টানা ষষ্ঠ বছরে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন ক্রমাগত বেড়েছে এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে চালের উৎপাদন সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। মোট চাল উৎপাদন বছরে ২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩.৯১ কোটি টন হয়েছে, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ।
বর্তমানে অন্যান্য কৃষি পণ্য উৎপাদনেও বাংলাদেশের সাফল্য বিস্ময়কর। সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এছাড়া পাট উৎপাদনে ২য়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু উৎপাদনে ৭ম অবস্থানে আমাদের দেশ। দেশি-বিদেশি ফল চাষেও অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে বেশ। স্ট্রবেরি, মাল্টা, ড্রাগন, রাম্বুটান, কফি, কাজুবাদাম, গোলমরিচসহ অপ্রচলিত কিন্তু লাভজনক বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে কৃষকদের।
২০০৬ সালে মাথাপিছু ফল গ্রহণের হার যেখানে ছিল ৫৫ গ্রাম, ১৫ বছরে তা বেড়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৮৫ গ্রাম। মাছ চাষ দেশে মৎস্য খাতের চেহারা আমূল বদলে দিয়েছে। মাংস ও ডিম সরবরাহকারী পোল্ট্রি খামার এবং দুধ ও মাংসের জন্য পশুপালন আজ সর্বব্যাপী। মৎস্য ও পশুপালনে বাংলাদেশের অসাধারণ সাফল্যের ফলে জনসংখ্যার মাথাপিছু প্রোটিন এবং দুধ গ্রহণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ আজ অল্প সংখ্যক দেশের অন্তর্ভুক্ত যারা মাছের উৎস থেকে অর্ধেকেরও বেশি খাদ্য প্রোটিন গ্রহণ করে। সুতরাং এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, বঙ্গবন্ধুর নীতি অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বাংলাদেশ এখন অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে।
এই সময়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণায় এবং আধুনিক কৃষি পদ্ধতির প্রবর্তনে ব্যাপক অগ্রগতি দেখিয়েছে। গবেষণা অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে, নতুন কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে, বড় বড় কৃষি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ফলস্বরূপ ১৫ বছরে দেশে উদ্ভাবিত হয়েছে ৬৯৯টি বৈরী পরিবেশে সহনশীল জাত, উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল এবং প্রায় ৭০৮টি প্রযুক্তি। এ ছাড়া যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষিকে আধুনিকায়ন করার কাজ চলছে।
২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার, সিডার, পাওয়ার টিলারসহ প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে কৃষকদের মাঝে। তিন হাজার কোটি টাকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলমান আছে। সব মিলিয়ে দেশের কৃষিব্যবস্থা ‘জীবন নির্বাহী’ কৃষি থেকে ‘বাণিজ্যিক কৃষি’তে রূপান্তরিত হচ্ছে। সর্বোপরি, বাংলাদেশের অভূতপূর্ব কৃষি উন্নয়ন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
কৃষিখাতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এবার ইশতেহারে কী প্রতিশ্রুতি ও টেকসই কৌশল অনুসরণের অঙ্গীকার করছে তা নিয়ে কৃষক সমাজ ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আগ্রহ ছিল। গত ২৭ ডিসেম্বর বুধবার, বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তার নির্বাচনী ইশতেহার উন্মোচন করেন, যার শিরোনাম ছিল "স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান”।
এবারের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের অর্জন এবং আগামী মেয়াদে ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়নে তাদের কর্মকৌশল ও লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে। যখন বিশ্বব্যাপী খাদ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য, জ্বালানি সংকট, করোনা মহামারি দ্বারা সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের চলমান অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে এমন বেশিরভাগ প্রতিবন্ধকতার সমাধানকল্পে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।
ইশতেহারে মোট ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছে আওয়ামী লীগ। এই ১১টি অগ্রাধিকার বিষয়ের মধ্যে ৪র্থটি হলো কৃষি সংক্রান্ত, যার শিরোনাম- সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। সবার জন্য খাদ্য এই অঙ্গীকারকে সামনে রেখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের ইশতেহারে কৃষির উন্নয়নে জোর দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশের জন্য কৃষি উন্নয়ন
ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হবে কৃষি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পুষ্টি চাহিদা পূরণ, সবার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিসম্মত খাদ্য সরবরাহ ও প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, বাণিজ্যিক কৃষির বিকাশ, কৃষিনির্ভর শিল্পের প্রসার, গ্রামীণ ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন, কৃষি ও অকৃষিজ পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি এবং বহুমুখীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসন ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এই কৌশলের লক্ষ্য।
কৃষি, কৃষক-কৃষাণি ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য প্রণীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন কৌশল অনুসরণের ধারা অব্যাহত থাকবে। বরাবরের মতো বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে এবারো।
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে গৃহীত কর্মসূচি আগামী দিনে আরও সম্প্রসারিত হবে বলে অঙ্গীকার বঙ্গবন্ধু কন্যার। কৃষিঋণ সহজলভ্য ও সহজগম্য করার লক্ষ্যে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে কৃষিঋণ দেয়া অব্যাহত থাকবে; কেন্দ্রীয় ব্যাংক ০.৫ শতাংশ হারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে পুনঃঅর্থায়ন করবে। ফলে কৃষিঋণ বিতরণে আরও উৎসাহিত হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
এছাড়া কৃষির জন্য সহায়তা ও ভর্তুকি তথা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি উপকরণে বিনিয়োগ সহায়তা অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ। সেই সঙ্গে কৃষিতে শ্রমিক সংকট লাঘব এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহজে ব্যবহারযোগ্য কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য করা হবে। ভর্তুকি দেয়া অব্যাহত থাকবে কৃষি যন্ত্রপাতিতে।
আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যেই কৃষি উৎপাদন আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে সব জমি আবাদের আওতায় আনার নীতি বাস্তবায়ন করছে। শেখ হাসিনার অঙ্গীকার, কোনো জমিই অনাবাদি থাকবে না। সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলায় গুরুত্বারোপ করা হবে। বাণিজ্যিক কৃষিকে উৎসাহিত করা হবে। শুধু তাই নয়, আধুনিক জ্ঞান নির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জৈবপ্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো-টেকনোলজিসহ গ্রামীণ অকৃষিজ খাতের উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন মোকাবিলায় উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণ করা হবে।
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষির আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ অব্যাহত থাকবে। সেইসঙ্গে কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।
এছাড়া বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, রফতানি বাণিজ্যের সম্প্রসারণ সর্বোপরি আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্বও অপরিসীম। ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর প্রাণিজ চাহিদা পূরণে উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান তৈরি ও গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখার লক্ষ্যে তাই মৎস্য ও গবাদি পশুখাতেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার।
কৃষির উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের বিশেষ অঙ্গীকার ইতিমধ্যে অর্জিত সাফল্য ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে কৃষির উন্নয়নের জন্য নিম্নলিখিত ১৩টি অঙ্গীকার করা হয়েছে-
১. ২০২৮ সালের মধ্যে গবাদিপশুর উৎপাদনশীলতা দেড় গুণ বৃদ্ধি করা হবে।
২. বাণিজ্যিক দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠা, আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনীয় ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতিগত সহায়তা দেয়া হবে।
৩. গুণগত মানসম্পন্ন পশুখাদ্য উপকরণের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তির প্রসার ও যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করা হবে।
৪. উৎপাদিত প্রাণিজাত পণ্যের বহুমুখীকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানিমুখী শিল্পের প্রসার করা হবে।
৫. ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে বাণিজ্যিক খামার ম্যাকানাইজেশন ও স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা হবে।
৬. সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারপূর্বক খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনে টেকসই মৎস্য উৎপাদন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন ৪৯ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন থেকে ৫৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণে জনপ্রতি মাছ গ্রহণের পরিমাণ ৬৭ দশমিক ৮০ গ্রাম/দিন থেকে বৃদ্ধি করে ৭৫ গ্রাম/দিনে উন্নীত করা হবে।
৭. সুনীল অর্থনীতির বিকাশ সাধনে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ ও দায়িত্বশীল মৎস্য আহরণ নিশ্চিত করা হবে।
৮. জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, অভিযোজন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ডেল্টা হটস্পটভিত্তিক প্রকল্প/কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
৯. ভ্যালু চেইন উন্নয়নের মাধ্যমে মৎস্যসম্পদের স্থায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বৈচিত্র্যময় ভ্যালু অ্যাডেড মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে মৎস্য অপচয় ১০ শতাংশ হ্রাস করা হবে এবং এ খাতে আগামী ৫ বছরে প্রায় ৬ লাখ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।
১০. মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রফতানি বৃদ্ধিতে রফতানিমুখী মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বেসরকারি খাতকে উদ্বুদ্ধ করা হবে; দেশের বাইরে নতুন নতুন বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আমদানিকারক উদ্বুদ্ধকরণে ফিশ এক্সপো আয়োজন এবং মৎস্যপণ্য প্রক্রিয়াকরণে এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রফতানি আয় ৪ হাজার ৭৯০ কোটি থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে।
১১. প্রাণিসম্পদ-গবাদিপশুর উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলমান কর্মসূচিকে বিস্তৃত করা হবে। এসব পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ ও মূল্য সংযোজনের লক্ষ্যে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।
১২. পুকুরে মাছ চাষ এবং যেখানে সম্ভব ধানক্ষেতে মাছ চাষের আরও প্রসারের জন্য উন্নত জাতের পোনা, খাবার, রোগব্যাধির চিকিৎসা অব্যাহত রাখা হবে।
১৩. খামারিদের জন্য সুলভে পুঁজি সংস্থান ও বিদ্যুৎ-সংযোগসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া অব্যাহত রাখা হবে।
পরিশেষে বলা যায়, স্বাধীনতার পর খাদ্য নিরাপত্তা ও দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু দেশে সবুজ বিপ্লবের সূচনা করেন। কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক চাষাবাদ ব্যবস্থা, সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ এবং মানসম্পন্ন বীজের ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে ।
বঙ্গবন্ধু বিদেশ থেকে ট্রাক্টর, সেচ যন্ত্র এনে কৃষি উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবনে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, কৃষিবিদদের দিয়েছিলেন প্রথম শ্রেণির মর্যাদা।
তাই কৃষি খাতের উন্নয়নে, বঙ্গবন্ধুর নীতি অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে যুগোপযোগী লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতি নির্ধারণ করেছে। আবারও দলটি ক্ষমতায় এলে, কৃষিতে এসব অঙ্গীকার ও পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তায় এবং গ্রামীণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করবে- এই বিশ্বাস কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টদের।
লেখক: পরিচালক, আইকিউএসি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।