দৈ. কি.ডেস্ক : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলমান এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত সব পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। ফলাফল কীভাবে ঘোষণা হবে সে সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে। মঙ্গলবার বিকালে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডে সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে স্থগিত পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের একদফা দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে শত শত শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে তারা সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিচে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দাবি আদায়ে নানা ধরনের স্লোগান দেন। অফিস ছুটির আগে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উঠে যায়। শিক্ষার্থীরা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় সচিবালয়ের সব প্রবেশপথ আটকে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, ইতোমধ্যে যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়েছে, তার ভিত্তিতে এবং স্থগিত পরীক্ষা এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে ম্যাপিং করে ফলাফল প্রকাশ করা হোক। এই দাবিতে সোমবার তারা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে। এরপর মঙ্গলবার সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে তারা বিক্ষোভ করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে পরীক্ষার বিষয়ে বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত সব পরীক্ষা অর্ধেক প্রশ্নোত্তরে অনুষ্ঠিত হবে। পুনরায় পরীক্ষা শুরুর তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও দুই সপ্তাহ পেছানো হবে। তবে পরীক্ষার সময় পূর্ণ সময়েই থাকবে। এমন সিদ্ধান্ত হলেও পরীক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্থগিত বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিলের দাবি মেনে নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, দাবি আদায়ে মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে কয়েকশ এইচএসসি পরীক্ষার্থী পুলিশি বাধা ডিঙিয়ে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে (৬ নম্বর ভবন) তারা অবস্থান নেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ সময় ঢাকা কলেজ, সরকারি কবি নজরুল ইসলাম কলেজসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান এবং আলোচনার জন্য সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশ্বাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। একপর্যায়ে তাদের দাবি মেনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দফায় দফায় চলমান এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এতে মোট আট দিনের পরীক্ষা স্থগিত করে বোর্ডগুলো। প্রথমে গত ১৮ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তারপর একসঙ্গে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু পরে জানানো হয়, ১১ আগস্ট পরীক্ষা হচ্ছে না। পরে বৃহস্পতিবার নতুন রুটিন প্রকাশ করা হয়। গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। চলতি বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি বোর্ড ও মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন।