সৈয়দ মো. সিয়াম
বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কাল। নির্বাচন কেন্দ্র করে গোট দেশ এই মুহূর্তে উৎসবমুখর। ভোট দেয়া প্রতিটি নাগরিকের অধিকার এবং কর্তব্য। আর এই কর্তব্য পূরণের অন্যতম পূর্বশর্ত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা। আর তা পূরণে সরকারের প্রতিটি সংস্থাসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকার এক্ষেত্রে সাংবিধানিক ধারা অক্ষুণ্ণ রেখে জাতিকে একটি উৎসবমুখর নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে। আমরা দেখছি ভোটের মাঠে প্রার্থী আর তাদের সমর্থকরা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সরকারের প্রশাসন এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা তথা বাহিনী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর রয়েছে।
কোনো পক্ষ যেন, অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে এবং ভোটারদের ভোটদানে বাধা দিতে না পারে সেজন্য নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টরাও কাজ করে যাচ্ছে। এসবের পাশাপাশিই সারাদেশের নির্বচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় থেকেই সারাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে অসংখ্য দেশি—বিদেশি পর্যবেক্ষক। যাদের সবারই বিশেষ আগ্রহ রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রতি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্রীয়ভাবে ভোট পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জনকে। আর স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। দেশীয় ২১০টি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা পর্যবেক্ষণে অংশ নেয়ার জন্য আবেদন করে। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে ৬৮টি সংস্থাকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য অনুমতি দেয় নির্বাচন কমিশন । অনুমোদনপ্রাপ্ত এসব সংস্থার পর্যবেক্ষকরা সারাদেশব্যপী এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ এরইমধ্যে শুরু করেছেন।
দেশি পর্যবেক্ষক ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ভারত সহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে মাঠে আছে। এবারের নির্বাচনে প্রায় ২৫০ জনের বেশি বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক পর্যবেক্ষণ করবেন। যত ব্যাপক ও বেশি পর্যবেক্ষক থাকবে, ততই আস্থা বাড়বে। পর্যবেক্ষক কম থাকা মানেই এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
এরইমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায় বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ গভীরভাবে মূল্যায়ন করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই লক্ষ্যে দেশটির দুটি নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বাংলাদেশে এসেছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন যে, এরা অন্য পর্যবেক্ষকদের মতো শুধু কেন্দ্রে ভোট দেয়া দেখেই দায় সারবে না যুক্তরাষ্ট্র। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে—পরের বিভিন্ন ঘটনাবলী ও কার্যক্রম মূল্যায়ন করতেই পাঠানো হয়েছে ছোট এই ‘যৌথ কারিগরি মূল্যায়ন দল’।
আগামীতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশকে এতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সূত্র অনুযায়ী জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই) আগামী নির্বাচনের সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করবে। এ জন্য তাদেরকে অ্যাক্রিডেশন দেয়া হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে একটি টেকনিক্যাল টিম পাঠাচ্ছে। এর বাইরেও কয়েকটি দেশ থেকে ছোট বড় টিম আসার কথা রয়েছে বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে। তারা নির্বাচনের দিন সারাদেশের ভোট গ্রহণের সব চিত্র পর্যবেক্ষণ করবেন।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এরইমধ্যে কয়েকটি দেশ, সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে আবেদন করে। যার মধ্যে পর্যবেক্ষক হিসেবে আবেদন করে ১৫৬ জন। নির্বাচনে থাকছে ১২৭ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক। এছাড়া, ৭৩ জন বিদেশি সাংবাদিক নির্বাচনের খবর সংগ্রহের অনুমতি পায় বলে জানায় ইসি। কমিশন আরও জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে চার জন, কমনওয়েলথ থেকে ১৭ জন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) থেকে ১২ জন, ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশন থেকে ১০ জন, জাপান থেকে ১৬ জন, আফ্রিকান ইলেক্টোরাল অ্যালায়েন্স থেকে ১০ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।
এত বেশি দেশি—বিদেশি পর্যবেক্ষকের নজর এখন আমাদের নির্বাচনের দিকে। যে নির্বাচন বাংলাদেশের সাংবিধানিক নীতি অনুসরণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে । যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ জন্যে ভোটের মাঠে রয়েছে অসংখ্য পর্যবেক্ষক, তার মানে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নিয়ে সবার আগ্রহ রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনগণের মনে এখন উৎসবের আমেজ। এই সাথে দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগ্রহ এতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। তাই সবার প্রত্যাশা, আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়