এ কে এম ইফতেখারুল ইসলাম
স্মার্ট বাংলাদেশ থিমে ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিন বদলের সনদ’ দিয়েছিল দলটি। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহারের থিম ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। আর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের শিরোনাম ছিল ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ।
এবার আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের ইশতেহারে ১১টি মানদণ্ডে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম একটি আদর্শিক ভিত্তি ছিল অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের হাত ধরে বাংলাদেশে স্বাধীনতার আগে ও পরে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি বিকাশ হয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক ধারা সাম্প্রদায়িক ধারায় ফিরিয়ে নেয় শুরু হয়। দেশে শুরু হয় ধর্ম অপব্যবহারের রাজনীতি। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়। রাষ্ট্রীয় মদদে উত্থান হয় জঙ্গিবাদের। জেলায় জেলায় বোমা বিস্ফোরণ, মানুষ হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা, হলি আর্টিজানে জঙ্গি আক্রমণ, কুমিল্লা-গাইবান্ধার পূজা মণ্ডপে হামলা, রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে আক্রমণ সবকিছুই বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে আছে। তবে দেশের সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বার বার প্রত্যাখ্যান করেছে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এদেশের মাঠে বা ভোটে কোথাও জনপ্রিয় হয়নি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকে বলা যায়, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা পাস্পরিকভাবে সম্পূরক। ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া গণতন্ত্র চিন্তা করা যায় না। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে, সকল নাগরিকের রাজনৈতিক-ধর্মীয় -সামাজিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিত করা। কোন বিশেষ জাতি-গোষ্ঠ বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পক্ষ বা বিপক্ষে অবস্থান নেয়া আধুনিক গণতান্ত্রিক মতবাদ সমর্থন করে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয় সকলের । ফলে বাস্তবিক অর্থে গণতন্ত্র জাতি, সম্প্রদায় এবং ধর্ম নিরপেক্ষ।
আওয়ামী লীগ শুধু দেশের পুরনো এবং সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল নয়, এটি গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের মূলধারাও। বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন । দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন শোষিতের গণতন্ত্র।
সেই অসাম্প্রদায়িক উন্নত বাংলাদেশ গড়তে, দেশের মানুষের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। আমাদের এ কথা মনে রাখতে হবে, যেসব দেশ ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেনি, সেসব দেশে উন্নয়ন গতিময় হয়নি।
আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ থিমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে, সেখানে দলটি বরাবরের মতোই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। তাদের এবারের ইশতেহার বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভাবের এক অবিস্মরণীয় দলিল। এই ইশতেহার দারিদ্র্য-ক্লিষ্ট, অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশের জন্যে নয়। এই ইশতেহার বদলে যাওয়া অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের। সম্ভাবনার হাতছানি দেয়া দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা দুরন্ত বাংলাদেশের। এই ইশতেহারের মাধ্যমে উন্নয়নের ট্রেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নামক স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। এই ট্রেন, জয় বাংলার ও সাধারণ মানুষের । এই ট্রেন, শেখ হাসিনার।
লেখক: পিএইচডি গবেষক, হাল, যুক্তরাজ্য।