দৈ. কি.ডেস্ক : ২৫ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পাচ্ছেন সংসদ সদস্যরা। নিজ নিজ সংসদীয় এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে এ টাকা বরাদ্দ করা হয়। পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি টাকা করে পাবেন তাঁরা। সংসদ সদস্যরা পছন্দ অনুযায়ী রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, হাটবাজার ও ঘাট নির্মাণে এ টাকা খরচ করতে পারবেন। তবে সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত সংসদীয় আসনগুলোর মোট ২০ জন সংসদ সদস্য এই টাকা পাবেন না। সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যরাও এ বরাদ্দ পাচ্ছেন না।
যদিও সংসদ সদস্যদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা চলছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানদের দ্বন্দ্ব দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে উপজেলা পরিষদ দুর্বল হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব আইন প্রণয়ন করা। আর ৫৯ অনুচ্ছেদে আছে, স্থানীয় উন্নয়ন স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব।
এ ছাড়া এর আগে নেওয়া এমন বরাদ্দের প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়। সেই প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়নি।পরিকল্পনা কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০ জন সংসদ সদস্য ছাড়া বাকি মোট ২৮০ সংসদ সদস্য প্রতিবছর ৫ কোটি টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ২৫ কোটি টাকা পাবেন। ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (৪)’–এর আওতায় সংসদ সদস্যরা এই টাকা পাচ্ছেন। পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বলে সিটি করপোরেশনের মধ্যে থাকা সংসদীয় এলাকাগুলোর সংসদ সদস্যারা এই বরাদ্দ পাচ্ছেন না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অবশ্য বলছে, এ প্রকল্পে সংসদ সদস্যদের সরাসরি টাকা পাওয়ার সুযোগ নেই। তাঁরা শুধু নিজ নিজ এলাকার পছন্দ অনুযায়ী রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, হাটবাজারের নাম দেবেন। এলজিইডি সে তালিকা ধরে এলাকার উন্নয়ন করবে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি সব জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর চিঠি দেয় এলজিইডি। সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী আলি আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকার গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সংসদ সদস্যদের পরামর্শ নিয়ে প্রকল্প প্রস্তাব ঢাকায় পাঠাতে হবে। প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় উন্নয়নের জন্য ২৫ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়। গেজেটভুক্ত সড়ক ছাড়া অন্য কোনো সড়কের নাম প্রস্তাবে উল্লেখ না করতেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এলজিইডি বলছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পে বিদ্যমান পাকা সড়কের অবশিষ্ট অংশ পাকা করার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। প্রস্তাবে উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়কের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর প্রত্যেক সংসদ সদস্য নিজ নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে পাঁচ বছরে ১৫ কোটি টাকা করে পেয়েছিলেন। এ ছাড়া ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রত্যেক সংসদ সদস্য ২০ কোটি করে এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পান।
এদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যদের জন্য নেওয়া প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (৩)’–এর আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৫৩ শতাংশ। এ প্রকল্পের ব্যয় ছয় হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। ২০২৬ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। পুরোনো প্রকল্প শেষ না করে নতুন প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছে এলজিইডি।
সার্বিক বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই বরাদ্দ অযৌক্তিকভাবে সংসদ সদস্যদের দেওয়া হচ্ছে। এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, ঘাট উন্নয়নের কাজ সংসদ সদস্যদের নয়। তাদের কাজ আইন প্রণয়ন করা। এলাকার উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার আছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছে। এখানে স্বার্থের সংঘাত হচ্ছে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদ সদস্যদের পছন্দের এসব প্রকল্পে এক বছর আগে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে টিআইবি। এই ভূমিকা থেকে সংসদ সদস্যদের সরে আসা উচিত।