দৈ. কি.ডেস্ক : কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা এলাকায় মৃত অবস্থায় পানিতে ভাসমান হাত-পা-মুখ বাঁধা সেই নারীর পরিচয় ও মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। তদন্ত শেষে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই নারীর নাম মোছা: খুশনাহার (৪০)। তিনি একজন ডিভোর্সি ও এক সন্তানের জননী। তিনি কটিয়াদী উপজেলার বাগপাড়া এলাকার মৃত ছমছু মিয়ার মেয়ে। তিনি ডিভোর্সের পর থেকে বাবার বাড়িতেই তার মায়ের সাথে থাকতেন।
পুলিশ জানায়, গত ৯ ডিসেম্বর বিকেলে ভিকটিমের সাথে বসবাসকারী তার বয়স্ক মা তার আরেক মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন ৷ এর আগে ১৫ দিন আগে ভিকটিমের ছেলে আলীরাজ করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা গ্রামে তার বাবার বাড়িতে বসবাসের নিমিত্ত চলে যায়৷ ঘটনার পরদিন ১০ ডিসেম্বর বেলা তিনটার দিকে ভিকটিমের মা বাড়িতে এসে তার ঘর তালাবদ্ধ দেখতে পান এবং ভিকটিমের ভাইয়ের বাড়িতে মেয়েকে খুঁজতে যান। পরবর্তীতে ভিকটিমের মা ও ভাই ভিকটিমের বাড়িতে এসে দেখেন টিনের জানালার উপরের টিন খোলা, ঘরে সিঁধ কাটা।
তারপর ভিকটিমের মা, ভাই ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ভিকটিমকে আশপাশে খুঁজতে থাকেন৷ একপর্যায়ে ১১ ডিসেম্বর দুপুর অনুমান ১ টার দিকে ভিকটিমের ছেলে আলীরাজ কটিয়াদী উপজেলার সতরদ্রোন এলাকার মাছুয়া বিলের মাঝামাঝি জনৈক চাঁন মিয়ার খাদের (ডোবা ছোট পুকুর সদৃশ) পশ্চিম পাশে ভিকটিমের ভাসমান লাশ দেখতে পেয়ে ডাক-চিৎকার শুরু করে৷ পরবর্তীতে গচিহাটা তদন্ত কেন্দ্র থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করে।
ভিকটিমের ভাই নজরুল ১২ ডিসেম্বর বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে মামলাটির তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো: আক্তারুজ্জামান; আইসি, গচিহাটা তদন্ত কেন্দ্র মামলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন৷ পুলিশ সুপার, কিশোরগঞ্জ জনাব মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে মামলাটির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। পুলিশ সুপারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় তদন্তকারি কর্মকর্তা তার তদন্তকালে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে কটিয়াদী উপজেলার বাগপাড়া এলাকার মো: জাহেদ মিয়ার ছেলে মো: রহমত উল্লাহ (৩০), পূর্ব পুরুড়া এলাকার মৃত দুলাল মিয়ার ছেলে আ: মমিন ওরফে ময়না (২০), বাগপাড়া এলাকার মৃত রতন মিয়ার ছেলে মো: হৃদয় (২৪)সহ মোট ৯জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে।
১৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার সন্দেভাজন আসামিদের মধ্যে মো: রহমত উল্লাহ্ (৩০) ঘটনার সাথে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে CrPC, 1898 এর 164 ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো: রিয়াজুল কাউসার এর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। মামলাটির তদন্তকালে ভিকটিমের ব্যবহৃত কানের দুল, কানের দুল বিক্রয়ের সময়ের সিসি ফুটেজ, ঘটনায় ব্যবহৃত কুড়াল, ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ও অন্যান্য আলামত উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়৷ বিবাদীগণ জানালা দিয়ে ভিকটিমের ঘরে প্রবেশ, ভিকটিমকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া, ভিকটিমকে পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা ও লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পুকুরে ফেলে দেওয়ার বিষয় প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত হলেও ঘটনার নানা বিষয়ে বস্তনিষ্ঠ সাক্ষ্য গ্রহণ, সংশ্লিষ্ট আলামত/অন্যান্য উদ্ধার এবং ঘটনার সাথে আর কেউ জড়িত আছে কি না তা যথাযথভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন বলে পুলিশ জানায়।