নিজস্ব প্রতিবেদক
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পর এবার সুশসানের জন্য নাগরিকও (সুজন) নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে কত জন সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী, কত জন কোটিপতি, কত শতাংশ শিক্ষিত এসব তথ্য দেওয়ার আড়ালে মূলত নির্বাচনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সুজন প্রার্থীদের হলফনামা ধরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপন’করে। সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নির্বাচিত ২৯৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২০০ জনের পেশা ব্যবসা। শতকরা হিসাবে সংসদ সদস্যদের ৬৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। একাদশ জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন ১৮৫ জন বা মোট সংসদ সদস্যের ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে ১ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে ২৬৯ জনের। শতকরা হিসাবে ৮৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ সংসদ সদস্যের সম্পদ কোটি টাকার ওপরে। একাদশ জাতীয় সংসদে ১ কোটি টাকার বেশি সম্পদশালী সংসদ সদস্য ছিলেন ২৪৭ জন বা ৮২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, একাদশ সংসদের তুলনায় এবার উচ্চশিক্ষিত সংসদ সদস্যের সংখ্যাও কিছুটা বেড়েছে। এবারের সংসদ সদস্যদের ৮২ দশমিক ৬০ শতাংশ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। একাদশে এই হার ছিল ৮১ শতাংশ।
এসব তথ্য তুলে ধরার পর পরই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একপক্ষীয় হয়েছে।’ সুষ্ঠু নির্বাচনের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যথার্থ বিকল্প থাকা, সবার জন্য সমতল ক্ষেত্র থাকা, ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ফলাফল কী হবে, তা অজানা থাকা, ক্ষমতার রদবদলের সুযোগ থাকা ইত্যাদি। এর মধ্যে এবারে নির্বাচনে অনেক বৈশিষ্ট্য ছিল না।’
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য বিষয়ে নিজেদের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে বদিউল আলম মজুমদার মূলত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন বলে মনে করেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নির্বাচনে একটি দল অংশ নেয়নি, তার মানে এই নয় যে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি।
নির্বাচনের ১৬ দিন পর নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণ দেওয়াটা সঠিক বলে মনে করেন না বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) প্রো-ভিসি এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক অধ্যাপক ড. নাসিম বানু।
তিনি বলেন, ‘এখন সুজন এসব কথা বলতে পারে না। তাদের মত একটা প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান যারা দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে আসছে তারা এটা ঠিক করেনি। নির্বাচন শেষ হয়েছে ১৬ দিন আগে। তাদের মতো প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের পর পরই ৮ বা ৯ তারিখে কেন তাদের প্রতিক্রিয়া বা পর্যবেক্ষণ দিল না।’
নাসিমা বানু বলেন, ‘একটা দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি, এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু নির্বাচনে তো ২৮টি দল অংশ নিয়েছে। এটা তো অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কোন দল বা কারা জিতবে নির্বাচনের আগে তো কেউ সেটা জানতো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক ধারবাহিকতা রক্ষা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন দল ছাড়াও সংসদের বিরোধী দলসহ ছোটবড় ২৯টি রাজনৈতিক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। এর বাইরে ৪ শতাধিক প্রার্থী ছিলেন স্বতন্ত্র। যাদের একটা বড় অংশ নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেন।