দৈ. কি.ডেস্ক : কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের মেডিল্যাব হেলথ সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় চার বছর সাত মাস বয়সী শিশু সামীম ইয়াসার আফফান এর মৃত্যুর বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শোকার্ত পরিবার ও এলাকাবাসী।
শনিবার (২২ জুন) সকালে দেওয়ানী আদালত ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযুক্ত দুই চিকিৎসকের শাস্তির দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন শিশুটির বাবা জেলা শহরের গাইটাল রাকুয়াইল এলাকার বাসিন্দা সারওয়ার-এ-জাহান উপল।
তার অভিযোগ, তার ছেলে আফফান ঠাণ্ডা ও গলা ব্যথায় আক্রান্ত হলে গত ২৪ এপ্রিল মেডিল্যাব হেলথ সেন্টারের নাক, কান ও গলা রোগের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম সুমনের কাছে নিয়ে যান।
চিকিৎসক শিশুটিকে দেখে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন টেস্ট দেন। এর মধ্যে ছিল এক্সরে, রক্তের গ্রুপ ও ব্লিডিং টাইম (বিটি)-ক্লটিং টাইম (সিটি)।
পরের দিন ২৫ এপ্রিল রিপোর্ট দেখে ডা. তৌফিক সুমন ও ওই ক্লিনিকের আবেদনবিদ ডা. মো. আবু তাহের মিঞা শিশুর বাবা সারওয়ার-এ-জাহান উপলকে তার ছেলের টনসিল ও অ্যাডিনয়েড অপারেশনের পরামর্শ দেন। তা না হলে শিশু আফফানের চরম ক্ষতি হবে বলে তারা ভয় দেখান।
দুটি অপারেশন একত্রে চলবে কি-না জানতে চাইলে, অপারেশন হলে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে উভয় চিকিৎসক আশ্বস্ত করেন। ওই দিন রাত ১০টায় ওই দুই চিকিৎসক শিশু আফফানের অপারেশন করেন। অপারেশনের পর শিশুটির চরম শ্বাসকষ্ট দেখ দেয়। যার ফলে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হয়।
পরের দিন ২৬ এপ্রিল বিকালে শিশু আফসানের শ্বাসকষ্ট প্রকট আকার ধারণ করলে দুই চিকিৎসক শিশুটিকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী ওইদিন রাতে শিশুটিকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়ার পর শিশুটির মুমূর্ষু অবস্থা দেখে সেখানে ভর্তি নেয়া হয়নি।
পরবর্তীতে শিশুটিকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আফফানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে বলেন, শিশুটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ অবস্থায় এত ছোট শিশুর অপারেশনের সিদ্ধান্ত দায়িত্বশীল কোনো চিকিৎসক নিতে পারেন না।
দীর্ঘ ২১ দিন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিআইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শিশুটি গত ১৭ই মে সন্ধ্যায় মারা যায়।
শিশুটির বাবা সারওয়ার-এ-জাহান উপল বলেন, ‘দুই ডাক্তারের ভুল এবং ত্রুটিপূর্ণ অপারেশনের জন্য আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। যা হত্যার শামিল। আমার মতো আর কোনো পিতা যেন ভুল চিকিৎসার কারণে সন্তান হারা না হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি ডা. তৌফিকুল ইসলাম সুমন এবং ডা. আবু তাহের মিঞার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বিষয়ে শিশুটির পরিবার সিভিল সার্জন বরাবরে গত ২৩ মে একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সিভিল সার্জন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেননি।
সংবাদ সম্মেলনে শিশুর বাবা সারওয়ার-এ-জাহান উপল ছাড়াও পরিবারবর্গ, এলাকাবাসী ও বেশ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর সেটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আমরা পাঠিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পদবি উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে, তাঁরা সার্বিক বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদন দিবে। এ ব্যাপারে আমার কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ার কিছু নেই।'
এদিকে এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১১ জুন তদন্ত কার্যক্রম করতে একটি চিঠি দেয় কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হেলাল উদ্দিনকে।
ডা. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘নাক, কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপককে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত দুইজন চিকিৎসকের মধ্যে অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক মো. আবু তাহের মিঞা হজ্বে গিয়েছেন। তিনি দেশের বাইরে থাকায় আমরা তদন্ত কার্যক্রমের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য গত ১৩ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। ডা. মো. আবু তাহের মিঞা দেশে এলেই তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করবে।’