দৈ. কি.ডেস্ক : চালু হওয়ার কয়েক বছর পর অত্যাধুনিক ডেমু প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। এ প্রকল্পের প্রায় প্রতিটি ধাপেই যে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে তা বহুল আলোচিত। এ প্রকল্পের কোনো কোনো ট্রেন এখন এতটাই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, এটি মেরামত করা সম্ভব নয়। ডেমুর যন্ত্রাংশ স্থানীয়ভাবে কোথাও পাওয়া যায় না। ট্রেনগুলো চীনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালনা করত। যে কদিন ট্রেনগুলো নিয়মিত চলাচল করেছে, সেই সময় মেরামতের পেছনে অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে রেলের বিপুল অঙ্কের অর্থ লোকসান হয়েছে। ডেমু কেনার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দীর্ঘ সময় চীনে অবস্থান করেছিলেন। বাংলাদেশের উপযোগী ট্রেন নির্মাণে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করাই ছিল তাদের দায়িত্ব। এ প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ায় এটা স্পষ্ট যে, প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চীনে অবস্থানকালে তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেননি
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে গত বছরের মে মাসে। তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশে বলা হয়েছে, ডেমু ট্রেনে ব্যবহৃত মডিউল, সেন্সর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা না গেলে ট্রেনগুলো মেরামত করা সম্ভব নয়। চীনা ঠিকাদারি কোম্পানির কাছ থেকেই শুধু ওইসব যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা সম্ভব। কারণ ওইসব যন্ত্রপাতি শুধু তারাই দিতে পারবে। এ বিষয়ে চীনের সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে আহ্বান জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। দীর্ঘ সময় পার হলেও রেলের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেন এ বিষয়ে পরিপূর্ণ কারিগরি সক্ষমতা অর্জন করতে পারেননি, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
এ ধরনের যে কোনো চুক্তিতে ট্রেনের মূল যন্ত্রাংশের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সাধারণ যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন ধরনের রক্ষণাবেক্ষণসংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ এবং মেরামত কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের যন্ত্র প্রদানের বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ থাকে। এ প্রকল্পে এর ব্যত্যয় ঘটেছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এসব যন্ত্রের সবক’টি সঠিকভাবে বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি ছিল। ধারণা করা যায়, পরে দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যেই সব ধরনের যন্ত্র ঠিকভাবে বুঝে নেওয়া হয়নি। এসব বিস্তারিত খতিয়ে দেখতে ডেমু বিষয়ে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্রয়োজনে একাধিক তদন্ত কমিটি করা দরকার।
রেল খাতে বিভিন্ন দেশে টেকসই-আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যার সবক’টি আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। শীতপ্রধান দেশের প্রযুক্তি আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য না-ও হতে পারে, এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। শীতপ্রধান দেশের জন্য উপযোগী ডেমু ট্রেন কেন আমাদের দেশে চালু হলো, এটি এক বিস্ময়। এ নিয়ে নানা রকম প্রতিশ্রুতির কথা শোনানো হয়েছিল। ডেমু প্রকল্প যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে, তাতে সেসব প্রতিশ্রুতির সঙ্গে দুর্নীতির যোগাযোগের বিষয়টি স্পষ্ট। স্বচ্ছতার স্বার্থে এ প্রকল্পের প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে যারাই যুক্ত ছিলেন, সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার। যথাযথ পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও রেল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবে না।