মিনার সুলতান
পাকিস্তানের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে বাঙ্গালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পথচলা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। বহু আন্দোলন,সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক দেশটির জন্ম হয়েছিল।কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডির পরপরই ধীরে ধীরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বদলাতে থাকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের এদেশীয় দোসররা পুণরায় দেশের শাসন ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়।
৭৫ থেকে ৯৬ টানা ২১ বছর পাকিস্তানি দোসরদের অত্যাচার সহ্য করে নানা ঘাত প্রতিঘাত মোকাবিলা করে। অবশেষে ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটের রায়ে দেশের শাসনক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এরপর ২০০১-২০০৬ সালের সময় ব্যতীত ২০০৮ থেকে বর্তমান সময় অবদি জনগণের পূর্ণ আস্থায় শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করে আজকের এই আওয়ামী লীগ যেনো অপরাজেয়,অপ্রতিরোধ্য।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ৬ বছর পর ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন পিতা মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা। নেতৃত্বে এসেই সবার আগে তিনি দল গঠনের দিকে মনোযোগ দেন। আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে সারা বাংলায় চষে বেড়ান। স্বৈরাচার সরকারের দমন পীড়নের মোকাবিলা করতে বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল নেতা কর্মীদের উজ্জীবিত করতে থাকেন। তার ফলাফলসরূপ তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনামলের পতন ঘটে।
তারপর ১৯৯১ সালে শুরু হয় খালেদা জিয়ার শাসনামল, আওয়ামী লীগে ভাঙ্গন তৈরি করতে শুরু করে ষড়যন্ত্র। হাল ছাড়েননি শেখ হাসিনা, পরম মমতায় আগলে রাখেন আওয়ামী লীগকে। যার ফলাফল দেখা যায় ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়ার পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কৌশলের বিপরীতে শেখ হাসিনার সুদৃঢ় পদক্ষেপে। সারা বাংলার আওয়ামী লীগ অন্তপ্রাণ মানুষকে নিয়ে তীব্র আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়ার ১৫ ফেব্রুয়ারি,১৯৯৬ সালের পাতানো নির্বাচন বানচাল হয়। অবশেষে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জনগণের ভোটের রায়ে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।সেই থেকে শুরু,আজ পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে টলাতে পারেনি কেউ।
২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট দেশের ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার পদক্ষেপ নেয়।২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তারিখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করে বিএনপি জামাতের সন্ত্রাসচক্র। ঠিক এক বছর পর ১৭ আগস্ট সারাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা করে বিএনপি জামাতের দোসররা। কিন্তু শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে এক বিন্দুও দুর্বল করতে পারেনি হত্যাকারীরা। বরং দ্বিগুণ শক্তিতে বলিয়ান হয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে থাকে আওয়ামী লীগ। এর ফলাফল পাওয়া যায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে। বিপুল জনসমর্থনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
আবার ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবরোধের নামে সারাদেশে আগুন সন্ত্রাস শুরু করে বিএনপি জামাত সন্ত্রাস জোট। চলন্ত গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করতে থাকে তারা। তাতেও দমে যায়নি আওয়ামী লীগ সরকার। বরং পেট্রোল বোমায় আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসায় আওয়ামী লীগ সরকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে দেয়।
২০২০ সালের শুরুর দিকে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে শুরু হয় করোনা মহামারি যার কবল থেকে রেহায় পায়নি বাংলাদেশও। পৃথিবীর বহু উন্নত সমৃদ্ধ দেশও করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা র পরিচয় দিয়েছিল সেসময়। কাতারে কাতারে মানুষ মারা গিয়েছে,কিছুই করতে পারেনি সেসকল দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সুপরিকল্পিতভাবে করোনা মহামারি মোকাবিলা করে গিয়েছে। ধাপে ধাপে লকডাউন, মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, টিকা সংগ্রহ ও বিনামূল্যে এর সঠিক প্রয়োগে করোনা মহামারি ধাক্কা উতরে যায় বাংলাদেশ।
অনেকেই সেসময় ধারণা করেছিল করোনা মহামারিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাবে আর এর রাজনৈতিক ফায়দা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য। কিন্তু অত্যন্ত দ্রিঢ়তার সাথে করোনা মোকাবিলায় সফলতার পরিচয় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সারাদেশের নেতা কর্মীরা মানুষের জন্য কাজ করে গেছে। করোনায় মৃত্যুবরণ কারী লাশ দাফন থেকে শুরু করে, কৃষকের জন্য বিনামূল্যে ধান কাটা, গরীব দুখী মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তাসহ সকল ক্ষেত্রেই পাশে ছিল আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। করোনাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এ ধরণের কার্যক্রমে মানুষের অন্তরে স্থান করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। করোনা ভয়াল ধাক্কায়ও পিছু হটেনি আওয়ামী লীগ বরং বীরদর্পে তা মোকাবিলা করেছে।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পশ্চিমা উন্নত দেশগুলো অর্থনীতি ভয়াবহ মন্দার সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি আঞ্চলিক ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে। একটি সুইস ব্যাংকও পুঁজি সংকটে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস, ভোজ্যতেল, সারসহ শিল্পদ্রব্যের মূল্য ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতির জন্য যুদ্ধসৃষ্ট সংকটময় অবস্থা এক বিরাট আঘাত হিসেবে দেখা দিয়েছে। তারপরও, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় সহনশীল।
বিএনপি ও তার মিত্রদের ধারাবাহিক আন্দোলনও টলাতে পারেনি আওয়ামী লীগকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে হারের পর থেকেই টানা সরকারবিরোধী আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপি ও তার মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো।
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচালের উদ্দ্যেশে নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন এই বিরোধী শিবির। ইদের পরে আন্দোলন, ৩১ দফা,২৭ দফা, ৪ দফা, ১ দফার নামে বহু কর্মসুচি করেছে তারা। সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন করেছে তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতন তো দূরের কথা আওয়ামী লীগের একটি কেশ পর্যন্ত ছুতে পারেনি এই বিরোধী শিবির। বিএনপি ও তার মিত্রদের সকল অবৈধ আন্দোলনকে রাজনৈতিক কৌশলে অত্যন্ত চমৎকারভাবে মোকাবিলা করেছে আওয়ামী লীগ ।
ধারাবাহিক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও আওয়ামী লীগের জয়রথ থামাতে পারছেনা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আন্তর্জাতিকভাবেও নানা ষড়যন্ত্র চলছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের এই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা এখন সবারই জানা। মানবাধিকার লঙ্ঘন , বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের দায় এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের অজুহাতে নানাভাবে আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপের মুখে ফেলতে চাচ্ছে এই অপশক্তি। সর্বশেষ বাংলাদেশকে ভিসা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার জায়গায় ইশপাতকঠিন দৃঢ় । সকল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশের মানুষের সমর্থনে এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
অপশক্তির মুখে চুনকালি মাখিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের দৌড়ে জনপ্রিয়তায় সবার চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র দেড় মাস। সারাদেশে নির্বাচনী আমেজ তৈরী হয়েছে। আওয়ামী লীগ সহ অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিভিন্ন সংস্থার জরিপে জানা যাচ্ছে, এবারও সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিগত দিনে দেশের মানুষের জন্য কাজ, বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের সফল বাস্তবায়ন, বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের পথে ধাবিত করার কারণে এবারের নির্বাচনেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আওয়ামী লীগ। যদি আসন্ন নির্বাচনেও জনগণের রায় আওয়ামী লীগের পক্ষে যায় তাহলে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ। এই আওয়ামী লীগ অপরাজেয়,অপ্রতিরোধ্য।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।