নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে অবরোধ, হরতাল, অগ্নি সন্ত্রাস, সহিংস কর্মসূচি সব পেরিয়ে এবার সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দিয়েছেন। বিভিন্ন সময় গণআন্দোলন গড়ে তুলেছেন যারা তারা বলছেন, গত ২৮ অক্টোবর কর্মসূচিতে বিএনপি সহিংস রূপ ধারণ করার পরে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যে মানুষ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেনি, সে অসহযোগের মতো কঠিন আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গী হবে, এটা ভাবা অযৌক্তিক।
বুধবার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশবাসীর প্রতি সরকারকে সহযোগিতা না করার আহ্বান জানিয়েছ রিজভী বলেছেন, ‘আজ (বুধবার) থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু। সেখানে তিনি বলেন, ‘ভোটগ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করবেন না, সরকারকে সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, ইউটিলিটি বিল এবং অন্যান্য প্রদেয় দেওয়া স্থগিত রাখুন। ব্যাংকে টাকা জমা রাখা নিরাপদ কি না সেটিও ভাবুন।’
অসহযোগ আন্দোলন ১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ কর্তৃক পরিচালিত একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন। ১ মার্চে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণার পর জনগণের স্বতস্ফুর্ত আন্দোলন শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ২ মার্চে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে ২৫ মার্চ পর্যন্ত চলমান থাকে। মোট ২৫ দিন স্থায়ী হয় এই আন্দোলন। আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন বয়কট করে একদফার আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও শরিক দলগুলোর লক্ষ্য এখন ভোট ঠেকানো। এ লক্ষ্যে এবার সর্বাত্মক আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে তারা। পাশাপাশি নির্বাচনে ভোটার ঠেকানোরও পরিকল্পনা করছেন তারা।
সাধারণ মানুষের প্রতি নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়ে যে অসহযোগের ডাক দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে বেসরকারি কর্মকর্তা রাশিদুল আহসান বলেন, এখন এসব কর্মসূচি আমার মানে জনগনের কী কাজে লাগবে? আমি কর দিব না এটা বলার সুযোগ আছে? রাস্ট্র আমাকে ধরবে যখন তখন বিএনপি আমাকে বাঁচাবে? আমার চাকরি গেলে সে চাকরি কে দিবে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কোন দলের কর্মসূচি ঠিক বা বেঠিক এক কথায় বলা যৌক্তিক হয় না। বিএনপি এই সময়ে এসে যে অসহযোগের কথা বলছে সেটা সময়োপযোগী না। এটা এমন একটা আন্দোলনের রূপ যেটা বিএনপি পালন করে দিতে পারবে না, এটা অবশ্যই জনগণকে পালন করতে হয়। ফলে ডাকার জন্য ডেকে দিলাম গালভরা কোন কর্মসূচি সেটা মাঠে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না।
এধরনের কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি নিজেদেরকে হাস্যকর জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘যেকোন দল তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য যেকোন রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করতে পারে। এটা তাদের অধিকার এবং আমাদের মতো উন্নয়রশীল দেশের জন্য এটা সংস্কৃতির অংশ। তবে সেই দলকে এটুকু অন্তত বুঝতে হবে যে, জনগনের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু আছে। এবং একইসঙ্গে জনগণের বিবেচনার বিষয় হলো- তাদের ইস্যুটি কতটুকু জনসম্পৃক্ত। এখন যেটা দাঁড়িয়েছে সেটা দেখতে মনে হয়- এটা বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন। রিজভীর মতো রাজনীতিবিদের কাছে এই পরিস্থিতিতে এরকম কর্মসূচির ঘোষণা একেবারেই অনভিপ্রেত।’