জাতীয় পার্টি থেকে এরশাদের নাম-নিশানা মুছে দেয়া হচ্ছিল। ৯ই মার্চের সম্মেলন হবে ঐতিহাসিক সম্মেলন। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা হবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে নতুন প্রাণের জোয়ার এসেছে। জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বিপর্যয় ঘটেছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে আবার প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মহাসচিব কাজী মামুনূর রশিদ প্রমুখ।
ওদিকে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের গতকাল এক অনুষ্ঠানে আগামী ১২ই অক্টোবর দলের কাউন্সিলের সম্ভাব্য দিন ধার্য করেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ের মিলনায়তনে পার্টির প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন। জিএম কাদের বলেন, কোনো বিশেষ দলকে বাঁচাতে জাতীয় পার্টি রাজনীতি করবে না। আমরা আমাদের নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাবো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় পার্টির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই সকল জেলা ও উপজেলার কাউন্সিল সম্পন্ন করতে হবে। প্রেসিডিয়াম সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের জাতীয় পার্টি মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। সকল জেলা- উপজেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন ওই সভায়। সেখানে জাতীয় পার্টির সার্বিক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হবে। আগস্টের মধ্যে ৩ থেকে ৫ সদস্যের ছোট ছোট কমিটি করে জেলায় জেলায় পাঠানো হবে। তারা দলের সাংগঠনিক শক্তি পর্যালোচনা করে কেন্দ্রে একটি রিপোর্ট দেবে। আগামী আগস্টের মধ্যেই সকল জেলার সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। আগামী ১২ই অক্টোবর কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করার জন্য সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে চুন্নু বলেন, অমার্জনীয় অপরাধের জন্য যারা বহিষ্কার হয়েছেন তারা ব্যতিত অন্য বহিষ্কৃতরা ক্ষমা চাইলে পার্টি চেয়ারম্যান যেন সহানুভূতির দৃষ্টিতে বিবেচনা করেন সে ব্যাপারে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়েছে। দল থেকে বহিষ্কৃত অনেকেই আবারও দলে ফিরতে চেয়ে যোগাযোগ করছেন। আমাদের পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ এর সঙ্গে আমাদের স্পর্শকাতর সম্পর্ক। তাই, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। রওশন এরশাদের নাম ব্যবহার করে যারা অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল জাতীয় পার্টির এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে রওশন এরশাদের অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু নির্দেশনা ও আহ্বান ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিবর্গের আহ্বানে এবং জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহার করে ঢাকায় বা অন্য কোনো স্থানে আয়োজন করা কোনো সম্মেলন, সভা, সমাবেশ কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
কাউন্সিলের বিষয়ে বেশ আশাবাদী রওশন এরশাদপন্থিরা। ছাত্র সমাজের সাংগঠনিক সম্পাদক (রওশনপন্থি) মৃধা মিরাজুল ইসলাম রাজ বলেন, নির্বচানের ভরাডুবির পর প্রাণ হারিয়ে ফেলেছে জাতীয় পার্টি। কিন্তু কাউন্সিলের ঘোষণার পর যেন প্রাণ ফিরে এসেছে। অনেক গুরুত্বর্পূণ নেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কাউন্সিলে চমক দেখতে পারবেন।
রওশন এরশাদপন্থিদের মুখপাত্র ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, এই পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় কাউন্সিল আমার ব্যবস্থাপনায় হয়েছে। পাঁচবার গঠনতন্ত্র সংশোধনের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। এর মধ্যে এটিই সব থেকে উৎসাহব্যঞ্জক হতে যাচ্ছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, উনি (জিএম কাদের) নিজেইতো মূল ধারার মধ্যে নেই। মূলধারা বলতেতো এরশাদ, তার স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ, তার ছেলে সা’দ এরশাদ। আমার প্রশ্ন ইশতেহারে এরশাদের কোনো নাম গন্ধ নাই। মূলধারা কারা ৯ই তারিখের কাউন্সিলের প্রমাণ হয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি আল মামুন বলেন, মূল দলের বাইরে গিয়ে কখনও ভালো কিছু হয়নি। এখনো পুরো নিয়ন্ত্রণ জিএম কাদেরের হাতেই আছে। তারা অন্য দল চাইলে করতে পারেন। কিন্তু জাতীয় পার্টি রেখে ভালো কিছু হবার সম্ভাবনা নেই।
এই বিষয়ে জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মাহসচিব ও সাবেক সংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, দলের সব নিয়ন্ত্রণ জিএম কাদের বলয়েই আছে। তবে তাদের রাগ আছে, ক্ষোভ আছে। তারা মিছিল মিটিং করতেই পারেন। আমাদের সিনিয়র কিছু নেতা চলে গেছেন। তারা একত্রে থাকলে ভালো হতো। আমরা যেহেতু তুলনামূলক দুর্বল দল সেহেতু একসঙ্গে চলাটাই ভালো ছিল।