বিশেষ প্রতিবেদক
কৌশলের খেলায় আওয়ামী লীগের কাছে বারবার হেরে যাচ্ছে বিএনপি। ধানের শীষ আবার একই ভুল করছে ভোটে না গিয়ে। সব বিষয়েই বর্তমান সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বিএনপি, কিন্তু এটাই সবচেয়ে বড় বোকামো হয়ে যাচ্ছে না তো? এই প্রশ্ন এখন ভোটারদের মনে। ২০০৬ সালের পর থেকে গত ১৭টা বছর বিএনপি ক্ষমতার বাহিরে। ১৯৭৫ সালের পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফিরতে একুশ বছর লেগেছিল। আওয়ামী লীগ চতুর্থবার ক্ষমতায় না ফিরতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে এখনও অনড়। এই সুযোগে গোল দিয়ে বেরিয়ে যাবে না তো আওয়ামী লীগ?
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি আওয়ামী লীগকে বাহিরে রেখে একটি নির্বাচন করেছিল, কিন্তু টিকতে পারেনি। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপিকে বাধ্য করেছিল। আওয়ামী লীগ যেটা পেরেছিল, বিএনপি সেটা পারেনি। গত এক যুগে বিএনপি আন্দোলনের নানান চেষ্টা করেছ। এবারও তাই করছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের কৌশলের কাছে পেরে উঠছে না বিএনপি। দলটির শক্তি ক্ষয় হয়েছে, হচ্ছে। মামলার সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েই চলেছে। আন্দোলন করে একটি দাবিও আদায় করতে পারেনি বিএনপি। সেটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি হোক কিংবা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবি।
নির্বাচনের মাঠ দখল করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের তুলনায় আওয়ামী লীগ স্বস্তিতে আছেন। টানা ক্ষমতায় থাকার জন্য একটা পাকা জায়গা তৈরি করেছে বর্তমান সরকার। বিএনপির অবরোধ আন্দোলন করে যে ভুলটা করল তাতে লাভ হয়েছে আওয়ামী ক্ষমতাসীনরা তাই আত্মবিশ্বাস পেয়ে গেছে।
২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ তাদের উন্নয়ন তত্ত্ব সামনে নিয়ে আসে। একের পর এক মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নির্বাচনকে সামনে রেখেই অবশ্যই। উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতির কথা ভুলছে দেশটির আমজনতা, ভোট বাক্সে তার কিছু হেরফের হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, গেল ১৫ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তার প্রতিফলন ঘটবে এবারের নির্বাচনে। দেশের মানুষ ধারাবাহিক সরকারের সুবিধা বুঝতে পারছে। এটি অব্যাহত থাকলে আগামী ৫ বছরে দেশ আরও উন্নয়নের পথে আরও এগিয়ে যাবে। আগুন সন্ত্রাসের ভয় দেখিয়ে ভোটারদের আর বিভ্রান্ত করা যাবে না।’
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ভোটের মাঠে না থাকলেও কেন্দ্রে ভোটার দেখতে চান আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। নাম ঘোষণার আগে রোববার গণভবনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে গণভবনে মতবিনিময় করেন তিনি। এ সময় দলের প্রার্থীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রে নিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। সভায় উপস্থিত নেতারা জানান, এই সভায় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাদের ক্ষেত্রে নমনীয় থাকার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, “মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর পাশাপাশি ডামি ক্যান্ডিডেটও (বিকল্প প্রার্থী) রাখতে বলেছেন (শেখ হসিনা), যেন কারও মনোনয়ন বাতিল বা প্রত্যাহার করলে যেন ডামি ক্যান্ডিডেট নির্বাচন করতে পারে।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “নেত্রী বিকল্প প্রার্থী রাখতে বলেছেন নির্বাচনে যাতে কেউ কোনো ধরনের অনিয়ম করতে না পারে। ভোটারের উপস্থিতি যাতে বাড়ে, সেজন্যও কাজ করতে বলেছেন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, “গণমাধমে জেনেছি-আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন এবার কেউ চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারবে। মানে- এরকমও হতে পারে- যারা বাদ পড়লেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন। এই বিষয়টি দলের প্রার্থীদের জন্য ভালো।”
ভোটের মাঠে বারবার ধর্মকে টেনে এনেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিরোধীরা বলে আওয়ামী লীগের ইসলামের শত্রু, কোরআন চাইলে বিএনপিকে ভোট দিতে হবে। অথচ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রথম বেতার-টিভিতে কোরআন তেলাওয়াত-তাফসির প্রচার শুরু হয়। বাংলাদেশেই এই ব্যবস্থা শুধু চালু আছে। মডেল মসজিদ তৈরি করতে শেখ হাসিনা ৭২২ কোটি টাকারো বেশি টাকা ব্যয় করেছেন। বিশ্বে কোন মুসলিম শাসকের এক সংগে ৫০টিরও বেশি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রথম বলেই ধরে নেওয়া হয়। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্রমশ নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে যে, তারাই টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় ফিরবে।