আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে এক প্রতিনিধি দলকে বলেছেন, এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্নেন্সের (ইএসজি) ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ফ্যাশন শিল্প ‘অপরাজেয়’ এবং এই বার্তা বিশ্বব্যাপী ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এখনই সময়। যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডসে ‘টেকসই পোশাকের ভবিষ্যত: বাংলাদেশের সেরা পোশাক’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এই আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাক নৈতিকভাবে বাংলাদেশেই যে উৎপাদিত হয় সেই বিষয়টি ভোক্তা ও নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরা।
গোলটেবিল বৈঠকে তাসনিম ইথিক্যাল সাপ্লাই চেইন অডিট প্রোগ্রাম সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন, কিউআইএমএ নৈতিকভাবে তৈরি পোশাক উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্থান দিয়েছে। তাসনিম বলেন, ‘টেকসই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ অপরাজেয়, কারণ এটি ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ সবুজ পোশাক কারখানার’ দেশ। সেখানে শীর্ষ ১০০ টি সবুজ কারখানার মধ্যে ৫৪ টি এবং পাইপলাইনে আরও অনেক কারখানা রয়েছে।
প্রিমার্কের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েটেড ব্রিটিশ ফুডসের গ্রুপ কর্পোরেট রেসপন্সিবিলিটি ডিরেক্টর ক্যাথরিন স্টুয়ার্ট বলেন, `বাংলাদেশের সঙ্গে প্রিমার্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তার মতে, ‘সোর্সিং দেশ হিসাবে এটি আমাদের জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্রমাগত আমাদের অর্ডার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের ১৯টি পণ্য ক্রয় করি এবং এটি সত্যিই বাড়ছে। সরবরাহ চেইনের প্রতিটি প্রান্তে আমাদের কাজ করার সুযোগ আছে।’
এসময় তাসনিম আরও বলেন, প্রিমার্ক পোশাকের স্থায়িত্বে বিনিয়োগ করছে এবং বাংলাদেশের সহায়তায় তারা এটি করছে।
নিউ লুকের হেড অব কোয়ালিটি সু ফেয়ারলি বলেন, ‘বাংলাদেশের কারখানাগুলো অটোমেশন ও সরঞ্জাম এবং নতুন ক্যাটাগরিতে প্রবেশের জন্য যে বিনিয়োগ করছে তা গর্বের সঙ্গে স্মরণ করছে। পাশাপাশি এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজ্যান্স) এর মতো সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করে বর্জ্য হ্রাস করতে উৎপাদনকারীদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি।
তাসনিম উল্লেখ করেন যে, পরিবেশগত স্থায়ীত্বের পাশাপাশি দেশের লক্ষ্য হচ্ছে গার্মেন্টস খাতের শ্রমশক্তির ৬৫ শতাংশ নারীকর্মীদের ক্ষমতায়ন অব্যাহত রাখা। সাম্প্রতিক মজুরি বৃদ্ধিতে ‘গর্বিত’ বাংলাদেশ। গত মাসে (নভেম্বর) দেশে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রায় ৫০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি মিরান আলী বলেন, ‘বাংলাদেশ সর্বশেষ মজুরি বৃদ্ধির জন্য গর্বিত। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের শ্রম আইন অনুসারে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ন্যূনতম মজুরি পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং এই বছর এটি জানুয়ারিতে আসন্ন নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে করা হয়েছে। তার মতে, প্রায় প্রতিটি কারখানায় আরও বেশি কর্মী প্রয়োজন, তাই চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা রয়েছে, যার অর্থ ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি দেশের শিল্পের জন্য টেকসই।
তিনি আরও বলেন, ‘উৎপাদনশীলতা, লজিস্টিকস এবং জ্বালানির মতো অন্যান্য ব্যয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া দরকার। তৈরিপোশাক শিল্প বিশ্বাস করে যে, গত মাসে নির্ধারিত মজুরি ন্যায্য এবং শ্রমিকরা এটি গ্রহণ করেছে।
মিরান আলী বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও অপ্রচলিত উভয় বাজারেই প্রবৃদ্ধির সুযোগ দেখতে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের বাণিজ্য যথেষ্ট বড় নয় এবং যতটা হওয়া উচিত ততটা শক্তিশালী নয়, তবে এর একটি কারণ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা ভুল জিনিস বিক্রি করছি। আমাদের রফতানি মূলত প্যান্ট, টিশার্ট, অন্তর্বাস এবং শার্ট। তবে অ্যাথলেটিকওয়্যারে প্রবৃদ্ধি আসছে।’
তিনি বিশ্বাস করেন যে, সিন্থেটিকস এবং মানবসৃষ্ট ফাইবার এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে বাংলাদেশের সম্প্রসারণ করা দরকার। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে বড় ক্রেতা পেয়েছি তবে আমাদের ছোট ব্র্যান্ডগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে এবং কেবল তখনই আমরা বাজার জুড়ে প্রবেশ করতে পারি।’
বাংলাদেশের পোশাক নির্মাতাদের জন্য ‘ডাইরেক্ট টু কনজ্যুমার’ একটি সম্ভাবনাময় প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্র উল্লেখ করে আলী বলেন, বিজিএমইএ এ দেশের ব্র্যান্ডগুলোতে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। বাংলাদেশের প্রধান রফতানি বাজারগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য, তবে বিজিএমইএ চায় বাংলাদেশ ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোতে তার অবস্থান ধরে রাখুক এবং অস্ট্রেলিয়া, চীন ও জাপানের মতো অপ্রচলিত বাজারেও সম্প্রসারণ করুক।
এথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভের চেয়ারম্যান মেরি ক্রেগ বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের দীর্ঘ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, যা শুরুতে বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে শুরু করা হয়েছিল, কিন্তু এখন আমরা সমৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘এই অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।