নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর গোপীবাগে ট্রেনের আগুন দেয়ার উদ্দেশ্য ছিল একটা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। যতে কেউ ভোটকেন্দ্রে না যায়। এটা ছিল বিএনপির অঙ্গসংগঠন মহানগর যুবদলের নেতৃত্বে একটা পরিকল্পিত হামলা। শনিবার (৬ জানুয়ারি) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এতথ্য জানান।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ২০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।পাশাপাশি তাদের আরেকটা হাই প্রোফাইল ভিডিও কনফারেন্সের রেকর্ড গোয়েন্দা পুলিশের হাতে এসেছে। প্রথমে কনফারেন্সে আসেন দক্ষিণ যুব দলের আহবায়ক খন্দকার এনাম। এর পর যুক্ত হন যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক এমএ গাফফার, যুগ্ম আহবায়ক ইকবাল হোসেন বাবলু, দপ্তর সম্পাদক শাহজাদ চৌধুরীসহ যুব দলের ৮টি টিমের নেতারা। সেই ভার্চুয়াল কনফারেন্সে ছিল যুবদল নেতা কাজী মনসুর। যাকে ভিডিও কনফারেন্সে ব্যবহার করা ফোনসহ আমরা গ্রেফতার করেছি ।’
তিনি আরও বলেন, ‘কনফারেন্সে আসার পর এক পর্যায়ে বলা হয়, যে আপনারা বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে বিশেষ করে নরসিংদী কাছে এসে সুবিধা মত জায়গায় অগ্নিসংযোগ করতে হবে। আগুন দেয়ার আরেকটা সুবিধাজনক স্থান হলো কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ রোড। এখানকার আপ এন্ড ডাউনে যেকোন সুবিধাজনক জায়গায় যাত্রীবাহী ট্রেনের বগিতে আগুন দিতে হবে। এটা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মিডিয়া দৃষ্টি আকর্ষিত হবে। পাশাপাশি জনগণও ভয় পাবে।’
ডিবি প্রধান বলেন, ‘এরই ধারাবাহিকতায় মহানগর দক্ষিণ যুব দলের নেতা রবিউল ইসলাম নয়নের তত্ত্বাবধায়নে যুব দলের কয়েকটি টিম গঠন হয়। এক সময় কনফারেন্সে বলা হয়, আপনাদের কে কে দায়িত্ব নিতে রাজে আছেন। যেখানে ১০/১২ জন ছিল। প্রথমে সবাই চুপ ছিল। তাদের মধ্যে একজন বলে আমি পারব। তার নামটা আমরা জানি। কিন্তু এই মূহূর্তে বলব না। তখন সে বললো আমার সঙ্গে আর কে থাকবে ? তখন লালবাগ চকবাজার থেকে রবিউল ইসলাম নয়ন ২০১৩-১৪ সালে কয়েকজন বোমা বিশেষজ্ঞের কথা বলেন। যারা ওই সময়ে বাংলামটরসহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন দিয়েছিল। বোমা বিস্ফোরণ করেছিল। এই রকম তিন জনকে লালবাগ থেকে কালেক্ট করার কথা বলেন নয়ন। এই তিন জনের নামও আমাদের কাছে আছে।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ওই ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেয়া একজনের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ীর আসপাশ এলাকা থেকে ট্রেনে আগুন লাগানোর ব্যবস্থা করে। তাদের নামও আমরা পেয়েছি। আপনারা দেখবেন যে এই মোবাইল থেকেই কিন্তু তারা ভিডিও কনফারেন্সটা করেছে। এই মোবাইলটা গ্রেফতার কাজী মনসুরের। এই মোবাইলটায় তাদের বক্তব্য আছে। আপনাদের সেটা দেয়া হবে। সেই ভিডিও কনফারেন্সে তারা সিদ্ধান্ত নেয় এবং টাকা বিতরণ করা হয়। বোমা হামলাকারীরা দাগি আসামি। এরা একসময় একসাথে জেলখানায় ছিল। এই দাগিদের নিয়েই মূলত এই কাজটি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যে অর্জিনালি, যারা জড়িত তাদের নাম ফোন নম্বর সব পেয়েছি। রাজনৈতিক পরিচয় একটু আগেই আমরা বলেছি। এখন আমরা মনে করি তদন্তের মাধ্যমে আমরা জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করবো। আমি মনে করি যে যারা মৃত্যু বরণ করেছেন তাদের জীবিত স্বজনদের প্রতি আমি সমবেদনা জানাই। আমি মনে করি তাদের খুঁজে বের করে অবশ্যই গ্রেফতার করবো।’
ডিবি প্রধান বলেন, ‘যে এলাকায় আগুনটা লেগেছে, সেই এলাকার বিএনপির একজন নেতা আছেন যার নামে ২৬টি মামলা আছে। পাশাপিশি ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ন আহবায়কের এঘটনায় সম্পৃক্ততার তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। আমরা জড়িতদের ২টা ভাগে ভাগ করেছি । একটা গ্রুপ তারা ভিডিও কনফারেন্সে এসে কারা কারা ঘটনাটি ঘটাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরেকটা গ্রুপ দূর থেকে পরামর্শ এবং অর্থ দিয়েছে। তাদের মধ্যে যার নাম আমরা পেয়েছি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবীর। যাকে আমরা গ্রেফতার করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমি বলি, আমরা যেই মোবাইলটা পেয়েছি, এই মোবাইলে সেই ভিডিও কনফারেন্সটি করেছে। সেখানে কারা আছে সেই নাম আমরা পেয়েছি। যে গ্রেফতার হয়েছে সেও এই ভিডিও কনফারেন্সে ছিল। ভিডিও কনফারেন্সে ছিল আনুমানিক ১২ থেকে ১৩ জনের মত। সেই ভিডিও কখন হয়েছে সেই প্রমাণও আছে। যে ৩টা দাগি বোমা বিশেষজ্ঞ আগুন দিয়েছে, তার নামও বলা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সে কেউ নাশকতায় রাজি হচ্ছিল না। এর মধ্যে একজন রাজি হয়। তার নামটা আমরা পেয়েছি, তার নামটা আমরা বলছি না তদন্তের স্বার্থে। এরই মধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে নবিউল্লাহ নবী এই সাথে মূল পরামর্শ এবং অর্থদাতা । এই পর্যন্ত আমরা ৬ জনকে গ্রেফতার করেছি।’