প্রফেসর ড. মো. মনিরুল ইসলাম (সোহাগ)
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের একমাত্র বিষয় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং এর মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া। এসব আন্দোলন জনসম্পৃক্ত বা জনগণের লাভ হয়- এমন কোনো দাবি ছিল না। শুধু এ সময়ে কেন, গত ১৫ বছর বিএনপি-জামায়াতের সব আন্দোলন ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য।
তারেক জিয়ার মামলা প্রত্যাহার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ, খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উচ্ছেদ, তার মুক্তি ইত্যাদি কোনো দাবির সঙ্গে জনগণের সমর্থন ছিল না। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে দেশের এবং জনগণের কী লাভ হবে?
এ প্রশ্নের কোনো উত্তর ছিল না তাদের আন্দোলনের কর্মসূচিতে। এমনকি করোনা মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাকে বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। জনগণকে বিএনপি-জামায়াত বোঝাতে পারেনি যে, তারা আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালো।
অন্যদিকে এ সময়ে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে, আয়-উপার্জন বেড়েছে। সব থেকে বড় কথা মানুষ স্বপ্ন দেখা শিখেছে। দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মসূচি মানুষকে আশাবাদী করেছে। ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সরকারি কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষ প্রত্যেকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সুফল পেয়েছে।
সরকার পরিবর্তন করে অনিশ্চয়তার ঝুঁকি নিতে চায়নি কেউ। জনগণের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করেছে, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশের পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। জনগণ ক্ষমতা বদলের হাতিয়ার হতে চায় না। কিন্তু দেশের এই সচেতন জনগণ আন্দোলনের ফলে তার নিজের জীবনে ও তার চারপাশে কী পরিবর্তন হবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে চায়।
একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এসব আন্দোলনে জনগণকে জিম্মি করা হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে জনগণ। পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে নিরীহ মানুষকে। এ আন্দোলনে জনগণের কি কল্যাণ হবে? বিএনপির নেতারা কি হলফ করে বলতে পারবেন, এ আন্দোলন তারা জনগণের জন্য করছেন? ব্যক্তি এবং পারিবারিক স্বার্থে দলকে ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের জনগণ সব জানে এবং বুঝে।
অথচ এদেশে সবকিছু হয় জনগণের নামে। রাজনীতিবিদরা জনগণের জন্য রাজনীতি করেন, কিন্তু ক’জন রাজনীতিবিদ জানেন জনগণ আসলে কী চায়? গত ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে এই স্পষ্ট চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন একমাত্র শেখ হাসিনা।
বর্তমানে এ দেশের সিংহভাগ জনগণ শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে ও তার ওপর আস্থাশীল। বাংলাদেশে এখন একজনই জনগণের নেতা আছেন, তার নাম শেখ হাসিনা। এ দেশের মানুষ মনে করে তিনি আপনজন এবং সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী।
সেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে “দিন বদলের সনদ”- “রূপকল্প ২০২১” বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন। এরপর ২০১৪ সালে “এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ”-স্লোগানে সরকার গঠন করে ১০টি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেন।
২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে “নিরাপদ ব-দ্বীপ” প্রণয়নের রূপরেখা প্রদান করে ২০১৮ সালে “সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ” শিরোনামে আবারও সরকার গঠন করে।
ফলস্বরূপ আজ অবধি দেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেছে বলেই দেশের বিভিন্ন খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে ধারাবাহিক উন্নয়নের প্রতিফলন দৃশ্যমান হচ্ছে এবং দেশের মানুষ এর সুফল ভোগ করছে। একসময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ এখন বিশ্বে একটি উন্নয়নের রোলমডেল। এর পুরোটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতিত্ব। তার এই অনন্য কৃতিত্বে গর্বিত বাংলাদেশ, গর্বিত বাঙালি জাতি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন এলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে আকৃষ্ট করতে অনেক প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়ে থাকে। অতীতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপি-জাতীয় পার্টি বা অন্যান্য দল যারা বৈধ-অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে, তারা জনগণকে দেয়া অঙ্গীকারের ৩০ ভাগও বাস্তবায়ন করেনি।
এমনকি প্রতিশ্রুতি পূরণে তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম একমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, নির্বাচনের আগে যেসকল প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে, তার শতভাগ পূরণ করার চেষ্টা করেছে এবং জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আরও দৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে।
ঠিক একইভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে-নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আর্থিকখাতে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা-সহ মোট ১১টি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থা’ স্লোগানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে।
এবারও শুধুমাত্র শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে দেশের সাধারণ জনগণ ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কে আবারও বিজয়ী করেছে।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বেগবান রয়েছে। ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বিশ্বের ২০তম অবস্থান অর্জন করবে বলেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। অথচ বিএনপি-জামায়াতসহ দেশী-বিদেশী একদল ষড়যন্ত্রকারী বাংলাদেশকে বরাবরের মতো পিছিয়ে নেবার যারপরনাই চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তাদের বিরতিহীন অপতৎপরতা ও সব ষড়যন্ত্রকারী এবং “নিন্দুকের মুখে ছাই ’দিয়েই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। আগামীতেও এই দুর্বার গতি অব্যাহত থাকবে।
এ দেশের মানুষের চাহিদা খুবই কম। তারা শান্তিতে থাকতে চায়। দুবেলা পেট পুরে খেতে চায়। রাতে শান্তিতে ঘুমাতে চায়। সন্তানের ভালো লেখাপড়ার নিশ্চয়তা চায়। অসুস্থ হলে উন্নত চিকিৎসা চায়। সুখে-শান্তিতে নির্ভয়ে জীবনযাপন করতে চায়। শেখ হাসিনা এ প্রত্যাশাগুলোর প্রায় সবই পূরণ করেছেন।
টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে কঠোর হবেন, এ প্রত্যাশা জনগণের। দেশের চলমান উন্নয়নের জোয়ার অব্যাহত রাখবেন এবং বিনির্মাণ করবেন আগামীর “স্মার্ট বাংলাদেশ”।
দেশের জনগণ জানে, একমাত্র শেখ হাসিনাই এ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন। তাই দেশ ও দেশের জনগণ এখন শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে।
লেখক: প্রক্টর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।