নিজস্ব প্রতিনিধি
শপথ নেওয়ার পর প্রথম রবিবার কর্মদিবসে নতুন সরকারর মন্ত্রিসভার সদস্যরা বলেছেন, দেশকে এগিয়ে নিতে তারা সবাই কাজ করবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, মর্নিং শোজ দ্য ডে। শুরুতে মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীরা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটাই আগামীর শক্তি হিসেবে কাজ করবে। পুরো মন্ত্রী পরিষদ নিয়ে আশান্বিত হওয়ার অনেক কারণ আছে।
এরইমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেছেন, দেশি-বিদেশি চাপ আছে। এগুলো অতিক্রম করার সাহস ও সামর্থ্য দুই-ই আওয়ামী লগের আছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আছে। সবাইকে নিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে ১শ দিনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। দেশকে বায়ু দূষণ মুক্ত করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, নতুন কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রমের আওতায় মূল্যায়ন পদ্ধতিতে কোনো দুর্বলতা বা সমস্যা ধরা পড়লে তা সমাধান করা হবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষেত্রে যা যা করণীয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তা করা হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কর্মকর্তাদের হুশয়ার করে বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের কোনও কাজে তদবির না করতে। বলেছেন, ‘যে কোনও কাজে আপনারা তদবিরে যুক্ত হবেন না, আমাকেও যুক্ত করবেন না।’
নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা রবিবার প্রধম কর্মদিবসে সচিবালয়ে নিজ নিজ দপ্তরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতিবিনিময় ও পরিচিতি সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দেশি-বিদেশি চাপ অতিক্রম করার সক্ষমতা সরকারের আছে বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আসবে আমরা জানি। এখন বিদেশিদের নানান ধরনের চাপ আসবে… দেশের অর্থনীতিকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রও আছে। এগুলোকে ভয় পেলে চলবে না। সাহস রাখতে হবে। দেশি-বিদেশি চাপ ও ষড়যন্ত্র অতিক্রম করার ক্ষমতা, সাহস ও সামর্থ্য বর্তমান সরকারের আছে।
তিনি বলেন, ‘দেশি-বিদেশি চাপের বিষয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন। চাপ বিদেশ থেকেও আছে, দেশেও আছে। কিন্তু আমরা অতিক্রম করার ক্ষমতা, সাহস ও সামর্থ্য রাখি। আমাদের শক্তির উৎস বাংলাদেশের জনগণ, আমাদের সম্পর্ক মাটি আর মানুষের সঙ্গে। মাটি আর মানুষের সঙ্গে যে দলের, যে সরকারের সম্পর্ক, সেই দল কোনও দেশি-বিদেশি চাপ বা কোনও চাপের কাছেই নতি স্বীকার করে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিদেশি চাপ আসবে… নানান ধরনের, আমাদের অর্থনীতিকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রও আছে। এগুলো অতিক্রম করতে হবে এগুলোকে ভয় পেলে চলবে না, সাহস রাখতে হবে।’
এদিকে প্রথমবারের মত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া আবুল হাসান মাহমুদ আলী সবার কাছে একটু সময় চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, সব সংকট রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় একা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এক্ষেত্রে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে কাজ করব। তিনি আরও বলেন, অর্থপাচার রোধে কাজ করা হবে। টাকার মূল্য কমে গেছে। সেটা নিয়েও কাজ করা হবে। এ বিষয়ে দেখি কী করা যায়!
এদেশের পোড়া মানুষের ক্ষত সারিয়ে খ্যাতি অর্জন করা নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, নতুন কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রমের আওতায় মূল্যায়ন পদ্ধতিতে কোনো দুর্বলতা বা সমস্যা ধরা পড়লে তা সমাধান করা হবে বলে।
সাবের হোসেন চৌধুরী বললেন দুর্নীতি অনিয়ম প্রশ্রয় পাবে না উল্লেখ করে বলেন, আমরা চাই এটা যাতে এক নম্বর মন্ত্রণালয় হয়। আমার পক্ষ থেকে আইনের প্রতি শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবো। মিডিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবো। অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবো।
প্রথমবারের মত মন্ত্রিসভা স্থান পাওয়া কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ বলেনছেন, কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নতুন করে বিগত সময়ের কার্যক্রমের খোঁজ নেবেন। একই সঙ্গে নতুন করে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য যেন সহজতর হয়, সেটি আমরা নিশ্চিত করবেন জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমরা সাপ্লাই চেইনের দিকে নজর দেব, যেন স্মুথ থাকে, কোথাও যেন বাধাগ্রস্ত না হয় ।”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের বিশেষ বরাদ্দ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন— বিশেষ কোনও কাজ না থাকলে আমি নিজেও নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসবো।
মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের প্রথমদিনের কথা বেশ দায়িত্বশীল উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, সামনের দিনগুলোতে তারা সমন্বিতভাবে এগিয়ে যাবেন। শুরু থেকেই কীভাবে তারা এগুচ্ছেন সেটা পরবর্তী সময়কে প্রাভাবিত করবে। আমরা আশান্বিত।