প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ৩, ২০২৪, ৮:৫১ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১৬, ২০২৩, ৮:০৮ অপরাহ্ণ
নানা আয়োজনে কবি রুদ্রকে স্মরণ
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
শ্রদ্ধা, গান, কবিতা আর আলোচনায় কবির গ্রামের বাড়ী মোংলার মিঠাখালীতে তারুণ্যের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ৬৭তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সকাল ৯টায় রুদ্র স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে সংসদ চত্বর থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর রুদ্রের বাড়িতে দোয়া অনুষ্ঠিত হয় এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
সকাল ১০টায় রুদ্র স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাপীঠে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন রুদ্র স্মৃতি সংসদের উপদেষ্টামন্ডলীর সভাপতি মাহামুদ হাসান ছোটমনি। সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রুদ্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পিআইবি-র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ। সভায় আরো আলোচনা করেন মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ, মোংলা-রামপাল সার্কেলের জৈষ্ঠ্য সহকারি পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার, রুদ্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও রুদ্রের অনুজ সুমেল সারাফাত, রুদ্রের বন্ধু উন্নয়ন সংস্থা আমাদের গ্রাম-র পরিচালক রেজা সেলিম, মিঠাখালী ইউপি চেয়ারম্যান উৎপল কুমার মন্ডল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মোংলা শাখার সভাপতি নূর আলম প্রমুখ ।
আলোচনা শেষে রুদ্রের কবিতা আবৃত্তি করেন সুমেল সারাফাত। সংগীত পরিবশেন করেন রুদ্রের গড়া সংগঠন অন্তর বাজাও।
সভায় বক্তারা বলেন, রুদ্র ছিলেন তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক। সমাজের সকল বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছেন। দেশ ও জাতির সংকটে রুদ্রের কবিতা হয়ে উঠেছে তারুণ্যের হাতিয়ার। বুিদ্ধবৃত্তিক আপোষকামিতায় দেশ যখন আকন্ঠ নিমজ্জিত, সত্য যখন নির্বাসনে এই রকম অস্থির সময়ে রুদ্রকে আমাদের নিজেদের জন্যে, দেশের জন্যে খুব প্রয়োজন ছিল। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন রুদ্র তার কবিতা, গান নিয়ে বেঁচে থাকবেন।
বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৮টা পর্যন্ত উন্নয়ন সংস্থা আমাদের গ্রাম ক্যান্সার কেয়ার ইনষ্টিটিউট বিনামূল্যে স্থানীয় গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যসবা প্রদান করে। প্রায় দুই শতাধিক নারী ও পুরুষ এ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করেন।
প্রসঙ্গত, মাত্র ৩৫ বছরের নাতিদীর্ঘ জীবন-সীমায় রুদ্র রচনা করেন সাতটি কাব্যগ্রন্থ-‘উপদ্রুত উপকূল’ (১৯৭৯), ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ (১৯৮১), ‘মানুষের মানচিত্র’(১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৭), ‘গল্প’ (১৯৮৭) ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’ (১৯৮৮) এবং ‘মৌলিক মুখোশ’(১৯৯০)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী পরিস্থিতিকে অবলম্বন করে তিনি ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ নামে একটি কাব্যনাট্যও রচনা করেন। এছাড়া তিনি বেশ কিছু গল্প লিখেছেন।
তার রচিত ও সুরারোপিত ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’- গানটি দুই বাংলায় অসম্ভব জনপ্রিয়। ১৯৮৭ সালে তসলিমা নাসরীনের সাথে বিচ্ছেদের পর মোংলায় বসে তিনি এ গানটি রচনা ও সুরারোপ করেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেন।
Copyright © 2024 Dainik Kishoreganj. All rights reserved.