নানা আয়োজনে জার্মানিতে “জার্মান-বাংলাদেশ সমিতি আউগবুর্গ”-এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। গেল শনিবার (২৩শে সেপ্টেম্বর) দুপুরে আপ্যায়ন ও আলোচনাসভার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর মূল আয়োজন শুরু হয়। বর্নাঢ্য এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন, জার্মান বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া এন ডি সি। আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, জার্মান বাংলাদেশ সমিতি আউগবুর্গ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ফজলুর রহমান। এসময় আরও বক্তব্য দেন, আউগবুর্গের মেয়র মার্টিনা ভিল্ড। অনুষ্ঠানটি দ্বৈতভাবে উপস্থাপন করেন বাংলাদেশী নওরিন আহমেদ এবং জার্মান তরুনী আন্নালেনা ভাগ্নার। জার্মান তরুণী আন্নালেনা ভাগ্নার বাংলা ভাষায় উপস্থাপনা বাংলাদেশীদের আরও বেশি আবেগাপ্লুত করেছে।
শুরুতেই পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অতিথিদের কাছে সংগঠনের কার্যক্রম তুলে ধরেন সভাপতি ফজলুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া ফজলুর রহমান ও তাঁর সংগঠনের সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং সংগঠনটির সকল কর্মযজ্ঞের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক সার্বিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে সেখানে প্রবাসীদের অবদানের কথাও তুলে ধরেন। বর্তমান সরকার আগামী তিন- চার মাসের মধ্যে চমৎকার একটি গনতান্ত্রিক নির্বাচন উপহার দিবে এমন আশাপ্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।
আউগবুর্গের মেয়র মার্টিনা ভিল্ড রাষ্ট্রদূতসহ উপস্থিত সকলকেই আউগবুর্গ শহরের এই চমৎকার হলে স্বাগতম ও আন্তরিক অভিনন্দন জানান। একটি বহুজাতিক-বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ও শান্তির শহর আউগবুর্গে জার্মান বাংলাদেশ সমিতির পঁচিশ বছরের ধারাবাহিক কার্যক্রমের প্রশংসা করেন তিনি। গেল বিশ বছর ধরে জার্মান বাংলাদেশ সমিতির পাশাপাশি এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া দুই মহাদেশের প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করায় ফজলুর রহমানকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মেয়র মার্টিনা ভিল্ড।
অতিথিদের বক্তব্য শেষে, সংগঠনটির আয়োজনে “গণতান্ত্রিক জীবন দর্শন” শিরোনামে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, প্রফেসর ড. আনিতা বোস, আউগবুর্গশহরের ইন্টিগ্রেসন ও ইমিগ্রেশন বিভাগের ব্যুরো প্রধান ড. মারগ্রেট স্পোন, প্রফেসর ড. ফিলিপ আন্দ্রেসন।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপমহাদেশের গনতান্ত্রিক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও ধারাবাহিকতা তুলে ধরেন। তাঁর উপস্থাপনায় অশোক ডোনাস্টি থেকে শুরু করে, বাউলিআনার লালন- রবীন্দ্র ধারা, সুফিবাদ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ হটাও আন্দোলনের গান্ধী ও নেতাজী ধারাবাহিকতায় আজকের গনতান্ত্রিক সকল ধারাকে চমৎকার ভাবে উঠে আসে।
পরে সন্ধ্যায় অতিথি, সদস্য ও দর্শকদের জন্য গান পরিবেশন করেন জীবন্ত কিংবদন্তি শিল্পী বাপ্পা মজুমদার। এছাড়াও মিনহাজ দীপনের তথ্যাবধানে বার্লিন থেকে আগত অপূর্ব বিশ্বাস, তাঁর স্ত্রী বৈশাখী বিশ্বাস, বিশিষ্ট নজরুল সংগীত শিল্পী আলোকানন্দ সুব্রিতা বিন্তিসহ বিভিন্ন শিল্পিরা পারফরম করেন অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে আউগবুর্গের ইন্টিগ্রেসন ও ইমিগ্রেশন কমিশনের সভাপতি মিসেস ডিডেম কারাবুলুট সহ বিশজন গুণীজনকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। তাঁদেরকে ক্রেস্ট ও উপহার তুলে দেয়া হয়। উপস্থিত সকলকে সংগঠনের মনোগ্রাম খচিত কলম ও নিয়ন টর্সলাইটসহ চাবির রিং প্রদান করা হয়। পরে রাতের খাবারের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।