বিশেষ প্রতিনিধি
গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি জামায়াত জোট যে সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে তা ইতোমধ্যে আদালতে প্রমাণিত। ২০২৩ এর নির্বাচনের আগে থেকে আবারও ভয়াবহ সহিংস রূপ ধারণ করে এই দলগুলো। যা শুক্রবার রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকান্ডের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। যদিও বরাবরই এই সহিংসতাগুলো ঘটার পরে দেওয়া দলীয় বিবৃতিতে তারা দায় অস্বীকার করে থাকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের দিন হরতাল ডেকে মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করছে যারা তারাই আবার আগুনের ঘটনা ঘটিয়ে দায় অন্যের কাঁধে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই খেলা বন্ধ হওয়া দরকার। এই বিশ্লেষকরা মনে করেন, কথায় কথায় বিদেশি সংস্থাগুলোকে ডাক দেওয়া থেকে ধারণা করা যায়, তারা আসলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নানাবিধ ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।
বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনা দুরভিসন্ধিমূলক মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী দেশের মতো নির্বাচন আয়োজন করতে সরকার একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে, আর দায় চাপাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। তাদের লক্ষ্যই হচ্ছে বিরোধী দলকে নিধন করে ক্ষমতায় টিকে থাকা।’ এই ঘটনায় জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।
যদিও ইতোমধ্যে ২০১৩ থেকে ২০১৫ এর সহিংস নাশকতার অভিযোগে দেশের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে দলের নেতাকর্মীরা। ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর বেআইনি সমাবেশ, পুলিশের কাজে বাধা-হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে করা পৃথক চারটি মামলায় এক দিনে ১২৯ জনের সাজা দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে এক মামলাতেই সাজা হয়েছে ৯৩ জনের। বাকি তিন মামলায় সাজা হয়েছে আরও ৩৬ জনের।
সাজা হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগ বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী। যে চারটি মামলায় বৃহস্পতিবার সাজা হয়েছে তার একটি ২০১৩ সালের, অন্য তিনটি ২০১৮ সালের। পরবর্তীতে ২৮ ডিসেম্বর এক যুগ আগের একটি নাশকতার মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ আট জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ে বলা হয়, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং বিএনপির সাবেক নেতা মো. হানিফকে দণ্ডবিধির দুটি ধারায় মোট ২১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হলো; যা অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাভোগ করতে হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে মানুষের উৎসাহের অন্ত নেই। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ২৯টি। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়েছে। এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাধা দিতে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বিএনপি-জামায়াত। এবারও সেই ২০১৩ ও ২০১৪ সালের মতোই টানা হরতাল, অবরোধ, ভাঙচুর, পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা এবং চলন্ত বাস-ট্রেনে অগ্নিসংযোগের দিকে ঝুঁকছে তারা।
২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত প্রায় ৪১৯ টি পৃথক ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্যসহ হত্যা করে ৪৯২ জন নিরপরাধ মানুষকে। এ সব অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে আহত হয় প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। এরপর ২০১৪ সালে সারাদেশের প্রায় ৫৮২টি ভোটকেন্দ্রে, শত শত যানবাহনে, রাস্তার পার্শ্ববর্তী বৃক্ষরাজিতে, এমনকি বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়েও আগুন দেওয়া হয়। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মারে বহু নিরপরাধ সাধারণ জনগণকে। ২০১৫ সালে ২ হাজার ৯০৩টি বাস-ট্রাক, ১৮টি ট্রেন, ৮টি যাত্রীবাহী লঞ্চ, ৭টি ভূমি অফিসসহ ৭০টি সরকারি অফিসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে বিএনপি-জামায়াত। এসব ঘটনায় প্রাণ হারান ২৩১ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। এজন্য তারা ছুটির দিনেও হরতাল ডেকেছে। যখন কিনা তারা জানে ছুটির দিনে হরতাল হয় না। তারা এই যে হরতাল ডাকলো, এটা মানুষ জানলো, বিদেশিরাও জানলো বিরোধীরা কিছু একটা করছে।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে জে (অব) আবদুর রশীদ বলেন, ‘হরতাল অবরোধ ডেকে যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলছে সেটা কীভাবে দুর্বৃত্তের কাজ হয়। হরতাল যারা করছেন তাদের এই দায় নিতে হবে। এধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তারা যেকোনভাবে স্বার্থহাসিলের নেশায় মত্ত।’