নিজস্ব প্রতিবেদক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে শুক্রবার । এতে বলা হয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসছেন। আর তাতে দেশের গণতন্ত্রের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না বলে আশংকার কথা বলা হয়েছে। অথচ শেখ হাসিনা সরকারের মেয়াদে গত পাঁচ বছর টানা গণতন্ত্রের সুচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্য তাই বলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান বিরোধীদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে দমন করা হয়েছে এবং তাদের খুব কম সংগঠিত হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এই দলের নেতারা যারা ইতিমধ্যে কারাগারে নেই তারা অন্তহীনভাবে আদালতে হাজিরা দিয়ে বেড়াচ্ছেন অথবা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল হচ্ছে জাতীয় পার্টি। বিএনপির সংসদে কোন প্রকার অংশগ্রহণ নেই। বৃহৎ আকারের রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। তবে আন্দোলনের আড়ালে চালিয়েছে তাণ্ডব, যার প্রমাণ গত ২৮ অক্টোবর দেখেছে বিশ্ব। অন্তত ৩২ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন এবং একজন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে আন্দোলনের নামে। সেসব কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
‘ডামি’ প্রার্থী বিষয়ে অপপ্রচার
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামীলীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে জয়লাভ না করে সেজন্য ‘ডামী’ প্রার্থী দাড় করিয়েছে। তবে প্রকৃত পক্ষে এই ‘ডামি’ প্রার্থীর ধারনা এসেছে বিএনপির পক্ষ থেকে। ‘ডামী’ প্রার্থী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, ডামি প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী এক নয়। প্রধানমন্ত্রী যে ডামি প্রার্থী রাখতে বলেছেন, সেটা সব জায়গায় নয়। যেসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ মনোনয়নপত্র জমা নাও দিতে পারেন, এমনটি অনুমেয় হলে সংশ্লিষ্ট আসনের নৌকার প্রার্থী নিজ দলের কাউকে প্রার্থী মনোনীত করবেন, এমনটাই বোঝানো হয়েছে।
বিএনপির ভোট বর্জন নিয়ে মিথ্যা তথ্য
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনী প্রচারণার সময় পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করার পর বিএনপি ভোট বর্জন করে। অথচ তফসিল ঘোষণার আগে একাধিকবার শর্তবিহীন সংলাপের আহ্বান জানান আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন পর্যন্ত আওয়ামীলীগের তরফ থেকে বিএনপিকে ভোটে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
কারাগারে আটক ও মৃত্যু নিয়ে অপপ্রচার
রবিবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংসতা চালাচ্ছে বিএনপি কর্মীরা। আর তাতে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে নাশকতাকারীদের। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির বড় সমাবেশের পর থেকে ২০ হাজার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঢাকার কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, তারা কারাগারগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতির খবর পেয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা ও স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ অক্টোবর অভিযানের পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত নয়জন বিরোধী দলীয় নেতা ও সদস্য কারাগারে মারা গেছেন- যা একটি মিথ্যা তথ্য। এই দাবি বরাবরই করে আসছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যার কোন ভিত্তি নেই। শুধুমাত্র বিএনপি’র দাবির উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি সাজান হয়েছে।
বাংলাদেশে মোট কারাগারের সংখ্যা ৬৮টি। কারা অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ পর্যন্ত সবকয়টি কারাগারে বন্দির সংখ্যা ৮০ হাজার ৯৭ জন। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দির সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার ৮৭১ জন, ২০২২ সালের একই দিনে বন্দি ছিল ৮০ হাজার ৫৩৭ জন এবং ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৩ হাজার ৬৮৯ জন বন্দি ছিল। আগের বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে ২০২৩ সালের শেষ দিনে বন্দির সংখ্যা প্রায় একই ছিল। এই তথ্য থেকে বোঝা যায় বিএনপি’র ২০-২১ হাজার নেতা-কর্মীর অতিরিক্ত বন্দির সংখ্যা সঠিক নয় বরং তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
মামলা ও জামিনের তথ্য
২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালে বাংলাদেশের পুলিশ স্টেশনে গড়ে প্রতিদিন ৫৬৫টি মামলা দায়ের হয়েছে এবং ১ হাজার ৯৫৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। কোন প্রকার রাজনৈতিক উত্তেজনা বা সংঘাত না থাকলেও বাংলাদেশের প্রতিটি পুলিশ স্টেশনে মামলা দায়ের এবং গ্রেফতারের গড় সংখ্যা এ অবস্থায় থাকে। কিন্তু এই বছর ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র ধ্বংসাত্বক রাজনৈতিক কর্মসূচী জোরদার হওয়ার পর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ৪৩৮টি মামলা এন্ট্রি হয়েছে এবং ১ হাজার ৮১৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। ২৮ অক্টোবর পরে বিএনপি- জামায়াতের নজীরবিহীন সন্ত্রাসের পরে গ্রেফতারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও অন্যান্য অপরাধের মামলার সংখ্যা কমেছে।
কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে ২৬ অক্টোবর থেকে এই বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিস্ফোরক দ্রব্য, নাশকতা, হত্যা, সাংবাদিকের উপর আক্রমন, গাড়ি ভাঙচুর সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে পুলিশ মোট ২০ হাজার ৪৬ জন গ্রেফতার করে। একই ভাবে বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ১০ হাজার ৯৯৭ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছে। আজ এই মুহূর্তে এ সংক্রান্ত মামলায় ৯ হাজার ৪৯ জন বন্দি কারাগারে রয়েছে।
কারাগারে মৃত্যুর তথ্য
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে সারা বাংলাদেশের কারাগারে মোট ৪৪ জন বন্দির শারীরিক অসুস্থতা জনিত কারণে স্বাভাবিক মৃত্যু হয় যা নভেম্বর মাসেও একই ছিল। ডিসেম্বর মাসে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতা অর্থাৎ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দদের নির্মম ভাবে হত্যার ঘটনা ছাড়া এখন পর্যন্ত জেলের অভ্যন্তরে কোন অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। জেলের অভ্যন্তরে কোন বন্দিকে কখনো নির্যাতনও করা হয়নি কারণ বন্দিদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে থাকে না। নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং এএনএফআরইএল এর দেয়া ৯ জন বিএনপি নেতা-কর্মির মৃত্যুর কোন নাম ঠিকানাও দেওয়া হয়নি। তাদের প্রচারিত তথ্য ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।