ড. মো. আব্দুস সামাদ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানে নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আর্থিকখাতে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনে রাষ্ট্রীয় লুটপাট, সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এসময় রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে দুর্নীতি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগসহ সকল সেক্টর বিএনপি-জামায়াতের দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
তথ্যসূত্র বলছে, ২০০১-০৬ শাসনামলে বিএনপির অনেক প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে মেতে উঠেছিল। জনসেবার নামে নিজেদের পকেট ভরতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে তারা। দুর্নীতির কারণে সে সময় বাংলাদেশ পরপর ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। আজকের বাংলাদেশ কোনোভাবেই দারিদ্র্যপীড়িত বা অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর নয়। আজকের বাংলাদেশ পরিবর্তিত বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন একটি দ্রুতগতির দেশ যা তার সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট আর ছোটখাটো ব্যর্থতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করলেও আওয়ামীলীগ সরকার তা কাটিয়ে উঠতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণায় বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাহক আওয়ামী লীগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।”
অতীতের ধারাবাহিকতায় এবার আওয়ামী লীগ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাস্তবায়নযোগ্য নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করেছে। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনার ধারাবাহিকতা দ্বাদশ নির্বাচনী ইশতেহারেও বজায় রাখা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে মূল্যস্ফীতি এখন অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে আর ঘোষিত ইশতেহার বাস্তবায়িত হলে শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে হয়। নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা করার কথাও বলা হয়েছে যা কার্যকর হলে আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এবং টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত আছে। পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রশাসনে দুর্নীতি নিরোধের লক্ষ্যে সকল ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণ করা হবে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যক্রমে দুর্নীতির কুফল এবং দুর্নীতি রোধে করণীয় বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করা হবে। এ লক্ষ্যে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর, দুর্নীতিমুক্ত ও জনকল্যাণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলমান থাকবে।
দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ সর্বপ্রকার হয়রানির অবসান ঘটানোর কাজ চলমান থাকবে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যেরে সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে কাজ করে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যক্রমে দুর্নীতির কুফল ও দুর্নীতি রোধে করণীয় বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করা হবে।”
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪-এ রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করার কথা বলা হয়েছে। আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমন করা হবে। এক্ষেত্রে পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সহযোগিতায় পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ঋণ-কর-বিল খেলাপি এবং দুর্নীতিবাজদের শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে।
খেলাপি ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া ব্যবস্থাপনা ও ঋণ প্রস্তাব মূল্যায়ন যাতে বস্তুনিষ্ঠ হয়, সেজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রভাবমুক্ত রাখা হবে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এই উত্তরণ যেমন একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জেরও। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে।
পরবর্তী সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়, মাতৃভূমির স্বাধীনতা থেকে শুরু করে এ দেশের যা কিছু মহৎ অর্জন, তা এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে সেই আশা আমরা করতেই পারি।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।