সৈয়দ মো. সিয়াম
উৎসবের আমেজে শেষ হলো বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। দেশের সর্বত্রই এ মুহূর্তে চলছে নির্বাচন পরবর্তী ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশের বিশাল কর্মযজ্ঞ। বাংলাদেশের সাংবিধানিক ধারা অক্ষুণ্ণ রেখে জাতিকে একটি যুগপৎ নির্বাচন উপহার দিতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন সক্ষম হয়েছেন। ভোটাধিকার প্রয়োগ প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। আর এ অধিকার আদায় তথা পূরণের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্বাচনের একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা।
আর তা পূরণে সরকারের প্রতিটি সংস্থাসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল সমূহ কাজ করেছে। উৎসবের এ নির্বাচনে যে জিনিসটার খানিকটা অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে সেটি হলো বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) র নির্বাচনে অংশ না নেওয়া।
যদিওবা বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও সারাদেশে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড কারোর জন্য থেমে থাকেনি, প্রার্থীদের প্রচারণা কিংবা দেশের জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগও কিন্তু থেমে থাকেনি।
তবে নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগের দিন এবং ভোট এবং ভোট গ্রহণের দিন সারাদেশে হরতালের ডাক দেয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়া প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। যাদের প্রধান এজেন্ডাই হলো দেশের চলমান গণতান্ত্রিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করা। তারা কখনোই চায়না দেশ এগিয়ে যাক।
তারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নানা ধরণের মিথ্যা অপপ্রচার ও গুজব ছড়াতেই ব্যস্ত থাকে। বিভিন্ন সময়ে বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করে এমন মিথ্যা তথ্য প্রচার করে কূটনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ, বোমা হামলা, পেট্রোল বোমা, আগুন সন্ত্রাস এমন বিভিন্ন উপায়ে বাংলার রাজপথ কলঙ্কিত করে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতার মসনদে অবৈধভাবে বসার পাঁয়তারাও তারা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এসব করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি তারা হরতালের নামে সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে সেই সাথে জনমনে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য যানবাহন ভাঙচুর, বোমাবাজি ও অগ্নিসংযোগ করেছে। নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি আশানুরূপ না থাকার জন্য হরতালের নাম দিয়ে মানুষকে বাসায় বন্দি করে নানা ধরণের ভীতিকর পরিস্থিতির তৈরি করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।
তারা এগুলো করেই ক্ষান্ত হয়নি নেক্কারজনকভাবে ভোট গ্রহণের আগমুহূর্তে ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে নিরীহ মানুষকে হত্যার মতো জঘন্যতম নিন্দনীয় কাজ করতেও তারা দ্বিধাবোধ করেনি। কী অপরাধ ছিল সেদিন বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ভ্রমণকারী যাত্রীদের, কী অপরাধ ছিল নিরীহ নারী ও শিশুদের। একে একে প্রায় দশের অধিক তাজা প্রাণ তাদের অপরাজনীতির বলি হলো।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসকল ঘটনার বিরূপ প্রভাব এদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণের মনে কিছুটা হলেও ভীতির সঞ্চার করেছে। এরসাথে ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে ভোটের আগের দিন অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
যার ফলে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির উপর কিছুটা প্রভাব বিস্তার করেছে। এভাবে জনমনে ভয় দেখিয়ে নির্বচনে ভোট প্রদান থেকে বিরত রাখার হীন অপচেষ্টা করে এখন তারা সংবাদমাধ্যমে ভোট বর্জন করায় জনগণকে স্যালুট জানাচ্ছে।
সত্যিই ব্যাপারটি অনেকটা উদোর পিণ্ডি বুধোর চাপানোর মতোই হাস্যকর। অথচ তারা নিজেরাই জানে না এসকল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা প্রতিনিয়ত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এ যুগে বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। অবাধ তথ্য প্রবাহের ফলে মানুষ এখন আর বিভিন্ন গুজবেও কান দেয় না। নিজের অধিকার আদায় করতে শিখেছে, মানুষ এখন আর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদের মদদদাতাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখতে চায় না।
মানুষ আগুন সন্ত্রাসীদের ঘৃণা করে, তাদের ডাকা হরতাল সহ বিভিন্ন কর্মসূচী এখন আর কেউ মানতে চায়না, এর প্রমাণ মিলেছে সাধারণ মানুষের এত কিছুর পরেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট কেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার মাধ্যমে।
এত ভয়ভীতির পরেও ভোটকেন্দ্রে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট প্রদানের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করে আন্দোলনের নামে ডাকা নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করছে। দেশের চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে তা স্থবির হয়ে যাবে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হলে।
জনগণ তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই, জাতির বৃহৎ স্বার্থে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে আবারোও ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। আর জনগণ আগামীর দিনগুলোতে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীদের দেশবিরোধী সকল অপচেষ্টার জবাব দিবে সরকারের পাশে থেকে। তার প্রতিফলনও আমরা এরই মধ্যে দেখতে পাচ্ছি।
সচেতন জনগণ এখন সঠিকভাবে সবকিছু নিজেদের বিবেক দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করতে পারে। তারা নিজেদের অধিকারকে কোন কিছুর বিনিময়ে বিক্রি হতে দেয়না । আর তারা খুব ভালো করেই জানে রাজনীতির ধারা ও পট—পরিবর্তনে কাজ করে ‘ভোট’নামক এক নাগরিক অধিকার। আর তারা এ অধিকার হারাতে চায় না কোন অপশক্তির চাপে।
উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে সাংবিধানিক ধারা বজায় রেখে দেশকে সামনে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার এগিয়ে যাবে জনগণের ভালোবাসা নিয়ে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়