নিজস্ব প্রতিবেদক
এ যেন এক মুখে দুই কথার সমান। বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অযাচিত’ হস্তক্ষেপ দেখছে গোটা দেশসহ সারা বিশ্ব। ঠিক সেই সময়ে চীনকে তাইওয়ানের আসন্ন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করার জন্য সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর এই সতর্কতার কথা জানান তিনি। শি'র সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, 'আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি যে আমি কোনো হস্তক্ষেপ আশা করিনা ।’
বাংলাদেশের মতোই আগামী জানুয়ারিতে তাইওয়ানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা চীনের সঙ্গে দ্বীপটির সম্পর্কের ভবিষ্যত সম্পর্কে অতিরিক্ত অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তাইওয়ান বেইজিং-ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনার একটি প্রধান উৎস। তাইওয়ান প্রণালী এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীন আগ্রাসী কৌশল অবলম্বন করেছে, যা আগামী বছরগুলোতে দ্বীপটিতে সম্ভাব্য আগ্রাসনের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
বাইডেন অতীতে বারবার বলেছিলেন যে তাইওয়ানে আক্রমণ করা হলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে তাইওয়ানকে রক্ষা করবে, যা মার্কিন সরকার বছরের পর বছর ধরে বজায় রাখা কৌশলগত অস্পষ্টতার সাথে সাংঘর্ষিক। অর্থাৎ মার্কিন স্বার্থে বাইডেনের এই হস্তক্ষেপ না করার হুঁশিয়ারি। তবে বাইডেনের মতে, তার প্রশাসন ‘চীন নীতি’ পরিবর্তন করতে চাচ্ছে না। আবার চীন থেকে আলাদা ভূখণ্ড হিসেবে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না।
বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্দিষ্ট দেশের উপর এমন আলাদা ভিসানীতি নিয়ে সমালোচনা আছে বিশ্বজুড়েই। অনেকেই বলছেন- এই ভিসানীতির আইনি ভিত্তি নেই। আবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মার্কিন রাষ্ট্রদুত পিটার হাসের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দৌরঝাপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। আবার অনেকেই তার ভুমিকাকে ভিয়েনা কনভেনশনের বরখেলাপ বলে জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপের আরেক উদাহরণ তৈরি করেছেন আন্ডার সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’। পিটার হাস যখন প্রভাব খাটিয়ে ব্যর্থ হচ্ছিলেন সরকারকে চাপে ফেলতে , তখন তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের কাছে ভিসা নীতির হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি নিঃশর্ত সংলাপে বসার আহ্বান জানান। যদিও তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্তে সংলাপের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নিঃশর্ত এই সংলাপের প্রস্তাব এসেছিল আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে। যদিও সেখানে সাড়া না দিয়ে শর্ত জুড়ে দেয় বিএনপি। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ বিফলে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ‘প্রেসক্রিপশন’ আসে নিঃশর্ত সংলাপের। আর তাতে তখন সংলাপে বসার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে বিএনপি।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু রাজনীতিবিদের ভূমিকাকে নব্য ঔপনিবেশবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে রাশিয়া। মস্কো মনে করে, এ ধরনের পদক্ষেপ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের’ চেষ্টা। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক্স-এ (সাবেক টুইটার) একথা জানায়।
গত এপ্রিলে সংসদে এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো দেশে ক্ষমতা ‘উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে’। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কাছে একটা বড় প্রশ্ন হল, কেন তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করল? যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য কাজ করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন তারা লঙ্ঘনকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যারা ভুক্তভোগী, তাদের পক্ষে নয়।’