নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘সুষ্ঠু’ ও ‘গণতান্ত্রিক মানদণ্ড’ অনুসরণ করে হয়নি বলে যেযমন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্য তা একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব থেকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
দেশটি বলেছে, এই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক বিরোধী দল অংশ না নেওয়ায় বাংলাদেশি জনগণের (প্রতিনিধি) বাছাইয়ের পূর্ণ সুযোগ ছিল না। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে এই অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেফলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) একজন FCDO মুখপাত্র বলেছেন, “যুক্তরাজ্য গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য, উন্মুক্ত ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ওপর। মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, আইনের শাসন এবং যথাযথ প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এই মানগুলো ধারাবাহিকভাবে পূরণ হয়নি। ভোটের দিনের আগে বিরোধী দলের সদস্যদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রেপ্তারে আমরা উদ্বিগ্ন”।
বিশ্লেষকরা বলছেন বিবৃতিতে দাবি করা হয় গণতান্ত্রিক ‘মানগুলো ধারাবাহিকভাবে পূরণ হয়নি’। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন এবারই প্রথম সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। যুক্তরাজ্য হাইকমিশন বলেছে, তারা সরকারি ভাবে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। তাহলে প্রশ্ন হলো, তারা নির্বাচনের সম্পূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কে কী করে অবগত হলো?
পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনকে সুষ্ঠু বললেও যুক্তরাজ্য সরকার কেন খুঁত বের করার চেস্টা করছেন সেটা বিবেচনায় নিতে হবে।
যুক্তরাজ্য শুধু বলেছে তারা সরকারি পর্যবেক্ষক নয়, কিন্তু তারা সজানো পর্যবেক্ষক এমনটা বলেনি। কেননা এই পর্যবেক্ষকেরা সুপরিচিত এবং নিজে থেকে এসেছেন। তাঁদেরকে সাজানো বলার কোনো অবকাশ নেই। এখন প্রশ্ন জাগে, তবুও যুক্তরাজ্য কেন বিএনপির কথার সাথে তাল মেলালো?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাই বাংলাদেশি জনগণের কাছে ভোট দেওয়ার সম্পূর্ণ সুযোগ ছিল না। এটি আংশিক সত্য কথা। আর আংশিক সত্য মিথ্যার চেয়েও ভয়ংকর। সব দল মানে বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল অংশ না নেয়াটা তাদের ইচ্ছা, এখানে সরকার বা নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। বিরোধীদের অভিযোগ ছিলো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, তাই তারা নির্বাচনে আসবে না। কিন্তু নির্বাচন বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সুন্দর এবং সুষ্ঠু হয়েছে।’
উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে যুক্তরাজ্য। লন্ডনে বসেই সকল সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নির্দেশ দিচ্ছে তারেক রহমান। তাকে ফেরত দেওয়া তো দূরের কথা, এ বিষয়ে চোখে প্রলেপ দিয়ে রেখেছে যুক্তরাজ্য।
লে জে (অব) আবদুর রশীদ বলেন, ‘গণতন্ত্রের কথা বলে একটি নির্দিষ্ট দলের পক্ষে নেওয়া এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে জনগণের ম্যান্ডেটকে উপেক্ষা করা দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু নয়।’