দৈ. কি.ডেস্ক : দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো নানা অজুহাতে ওষুধের দাম বাড়িয়ে থাকে। বস্তুত দেশীয় কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে।
অথচ দেশে উৎপাদিত প্রায় ৯৭ শতাংশ ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো। প্রশ্ন হলো, এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নীরব কেন? জানা যায়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যোগসাজশে এপ্রিলে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেশকিছু ওষুধ কোম্পানি অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়িয়েছে। এর প্রতিবাদে সম্প্রতি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) হাইকোর্টে রিট পিটিশন করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের ওষুধের দাম বৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে রুল দেন হাইকোর্ট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ কোম্পানিগুলোর উচ্চাভিলাষী বিপণন নীতি এবং বেশি মুনাফা করার প্রবণতা। অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের নানা উপহারসামগ্রী দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানিগুলো নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। আমরা মনে করি, উন্নত বিশ্বের মতো ট্রেড নামের পরিবর্তে জেনেরিক নাম (সব কোম্পানির ওষুধের একই নাম হবে) প্রেসক্রিপশনে লেখার নিয়ম চালু করা হলে অসুস্থ মার্কেটিং প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে এবং বিভিন্ন ওষুধের দাম অনেকাংশে কমে যাবে। ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসাবে বেশকিছু যুক্তি উপস্থাপন করে থাকে। যেমন, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে ওষুধের কাঁচামালের দামও বেড়ে গেছে। ডলারের বিনিময় মূল্যে অস্থিরতাসহ আনুষঙ্গিক কিছু কারণে ওষুধের দাম কিছুটা বাড়তে পারে বটে। তবে যে হারে তা বাড়ছে, সেটা কতটা গ্রহণযোগ্য, খতিয়ে দেখা দরকার।
নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনিতেই মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে বহু মানুষের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে; অনেকে ঝুঁকছে ঝাড়ফুঁকের দিকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের স্বাস্থ্য খাত মুখ থুবড়ে পড়বে। ওষুধ শিল্পে দেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। এ শিল্পের বিকাশে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে, এটাই আমরা চাই। তবে ওষুধ উৎপাদনকারীরা অনৈতিকভাবে বাড়তি মুনাফা করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব জনগণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের উচিত অতি প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো উৎপাদন করে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে ভোক্তার কাছে সরবরাহের ব্যবস্থা করা।