ডেস্ক:ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দেশটির লক্ষাধিক মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। গাজায় জিম্মি চুক্তির দাবিতে অন্তত এক লাখ মানুষ নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগে হামাসের হাতে জিম্মি ইলাদ কাতজিরের মৃতদেহ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী উদ্ধার করেছে। এরপরেই তেল আবিব এবং অন্যান্য শহরে সমাবেশ শুরু হয়।
স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ‘এখনই নির্বাচন’ এবং ‘ইলাদ, আমরা দুঃখিত’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলো। পরে পুলিশ জোরপূর্বক তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি খুব জোরালো হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বেশ চাপে রয়েছেন নেতানিয়াহু।
গাজায় যারা জিম্মি হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরাও নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা হামাস এবং তার সহযোগীদের কাছে গাজায় জিম্মি থাকা ১৩০ জনকে মুক্ত করতে সরকারের অক্ষমতায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার সময় ইলাদ কাতজিরকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার আইডিএফ তার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। জানুয়ারিতে জিম্মিদের নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে তাকে জীবিত দেখা যায়।
নাওম পেরি নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ইলাদ কাতজির বন্দীদশায় তিন মাস বেঁচে থাকতে পেরেছিলেন। আজ আমাদের সঙ্গে তার থাকা উচিত ছিলো। সে আজ আমাদের সাথে থাকতে পারতো।
আয়োজনকারীরা জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের প্রায় ৫০টি স্থানে সমাবেশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে সরকারবিরোধী ধারাবাহিক সমাবেশগুলোয় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে যে, তিনি বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, তিনি হয়তো বাকি জিম্মিদের আর মুক্ত করতে পারবেন না।
তেল আবিবে বিক্ষোভ চলাকালীন সমাবেশের ওপর একটি গাড়ি চাপার ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচজন আহত হয়। যদিও ওই ঘটনার কারণ পরিষ্কার নয়।
কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিআইএ ডিরেক্টর বিল বার্নস এবং কাতারি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি মিশর, ইসরায়েল এবং হামাস থেকে আসা আলোচকদের সঙ্গে বসবেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক পোস্টে কাতজিরের বোন কারমিত পালতি কাতজির তার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, কাতজির জীবিত ফিরে আসতো যদি তারা একটি নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজী হতো।
ফেসবুকের এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, আমাদের নেতৃত্ব কাপুরুষোচিত এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালিত। এ কারণেই এই চুক্তি এখনো হয় নি। প্রধানমন্ত্রী, যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা, জোটের সদস্যরা আপনারা আয়নায় নিজেদের দেখুন এবং বলুন যে আপনাদের হাত থেকে রক্ত ঝরেছে কি না।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। তারপর থেকে ছয় মাস ধরে সেখানে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।
প্রাণঘাতী এই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নারী ও শিশুরা। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলা এই সংঘাত কবে থামবে তার কোনো ইঙ্গিত নেই।