বিশেষ প্রতিনিধি
দুপুরে অসহযোগ, বিকেলে অবরোধ, এরপরএ হরতাল - স্বার্থ হাসিলে কোনটা করতে চায় বিএনপি তা যেনো স্পস্ট নয়। আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ, তফসিল বাতিল, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে অহযোগের কথা বলে আবার গণসংযোগ ও অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণাকে “পথ হারিয়ে হতবিহ্বল” বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকালে অনলাইন ব্রিফিংয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ঘোষণার পরেই এমন মন্তব্য করেন তারা। রিজভী বলেন, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার (২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর) গণসংযোগ করবে যুগপতে থাকা বিরোধী দলগুলো। একই দাবিতে আগামী রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ পালন করবে দলগুলো।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে দলটি। এর আগে ১১ দফায় ২১ দিন অবরোধ ও চার দফায় ৫ দিন হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। ইতোমধ্যে তাদের সব কর্মসূচি দাবি আদায় ছাড়াই শেষ করতে হয়েছে। জনসম্পৃক্ততা না থাকায় এরইমধ্যে অবরোধ হরতাল কোনটাই কার্যকর হতে দেখা যায়নি।
বিএনপি দেখছে নির্বাচনের প্রক্রিয়া যথানিয়মে শুরু হয়ে গেছে, জনগণের মধ্যে যথেষ্ট উদ্দীপনা, ফলে এখন করনীয় নির্ধারণ করতে পারছে না দলটি উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, যেকোন দল তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য যেকোন রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করতে পারে। তাই বলে তারা কী করতে চায় সেটাই যেনো বুঝতে পারছে না। একই সাথে অসহযোগ, অবরোধ, গণসংযোগ। এরকম কর্মসূচি আগে দেখা যায়নি। বিএনপি একটা বড় দল, তারা যে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এটা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা না।
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করতে না পারার প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ, দ্বিতীয় দফায় ৫ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে ৭ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত অবরোধ, তৃতীয় দফায় ৮ ও ৯ নভেম্বর, চতুর্থ দফায় ১২ ও ১৩ নভেম্বর, পঞ্চম দফায় ১৫ ও ১৬ নভেম্বর, ষষ্ঠ দফায় ২২ ও ২৩ নভেম্বর, সপ্তম দফায় ২৬ ও ২৭ নভেম্বর, অষ্টম দফায় ২৯ নভেম্বর, নবম দফায় ৩ ও ৪ ডিসেম্বর, দশম দফায় ৬ ও ৭ ডিসেম্বর এবং একাদশ দফায় ১২ ডিসেম্বর সকাল ৬টা থেকে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টা অবরোধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া গত ১৯ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে ২১ নভেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী, ২৭ নভেম্বর অর্ধদিবস এবং ১৮ ডিসেম্বর সর্বাত্মক সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপি। এর কোন কর্মসূচিকেই তারা সফল দাবি করতে পারেনি। দিনের পর দিন অবরোধ ডেকে একসময় শ্রমজীবী মানুষের বিরাগভাজন হতে হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় মনে করেন, অসহযোগ আন্দোলনে সফল হতে হলে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকতে হয়। এরমধ্যে দেড় মাস ধরে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ায় এরইমধ্যে জনসম্পৃক্ততা হারিয়েছে দলটিং ফলে এখন তারা ঠিক কী উপায়ে দাবি আদায় করবে বুঝে উঠতে পারছে না বলেই খেই হারিয়ে ফেলেছে।