বিশেষ প্রতিনিধি
২০১৩-১৪ সালের মতো বিএনপি-জামায়াত যেভাবে পুলিশকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছিল সেই একই কাদয়দায় এবারও হামলা চালিয়েছে। শুক্রবার বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে এক পুলিশ সদস্যকে। এছাড়া তাদের হামলায় আহত হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক সদস্য। এদের মধ্যে ৬০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর দুইটার দিকে বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড় এলাকায় তিন দিক থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালায় বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটের নেতা-কর্মীরা। কালভার্ড মোড়, পুরানা পল্টন ও সেগুন বাগিচা— এই তিন দিক থেকে পুলিশকে আক্রমণ করে তারা। এক পর্যায়ে পুলিশ পানির ট্যাংক মোড়ে অবস্থান নিয়ে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। পাল্টা হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াত নেতা–কর্মীরা। বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়ে পুলিশ সদস্য আবদুর রাজ্জাককে পিটিয়ে জখম করা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে সাংবাদিকরাও বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের আক্রমণের শিকার হন। আহত পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
রাজধানীর নয়াপল্টন, কাকরাইল ও নাইটিঙ্গেল মোড়ে দফায় দফায় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৯ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ২২ জনকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা: আলাউদ্দিন বলেন, ‘বেলা এগারো টার পর থেকে বিকাল চার টা পর্যন্ত ৪০ জন আহত হয়ে এসেছে। আমরা তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, অনেকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, হাতে, পায়ে, মাথা, শরীরে বিভিন্ন জখম, কাটা জখমসহ বিভিন্ন ধরনের আহত হয়েছেন। বিকালে দিকে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে, এ অবস্থায় এক সাথে বেশি রোগী আসায় চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে।
এছাড়া রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আগুন দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন এতথ্য জানিয়েছেন।
নয়াপল্টনের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, প্রধান বিচারপতির বাসভবন এলাকা, পল্টন থেকে বিজয়নগর পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে থেমে থেমে হচ্ছে সংঘর্ষ হয়। কাকরাইলে পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিএমপির ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরাই প্রথমে সরকারি স্থাপনায় হামলা করেছে। বিএনপি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে করার কথা দিয়েছিল। ডিএমপি কমিশনারের কাছ থেকে তারা এমন শর্তেই অনুমতি নিয়েছে। হঠাৎ করে বেলা ১২টার পর থেকে তারা প্রধান বিচারপতির বাড়ির ফটকে ও জাজেস কোয়ার্টারের সামনে (বিচারকদের বাসভবন) আক্রমণ করে। আইডিবি ভবনের সামনে দুটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে।’