আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গত দুই দশকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন চেক প্রজাতন্ত্রের ইউরোপিয়ান পিপল’স পার্টির রাজনীতিবিদ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মেম্বার টমাস জেডেচভস্কি। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার বাঘ হিসাবে উল্লেখ করে তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে দেশটির শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। গত ৭ নভেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেছেন।
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে জানিয়ে টমাস জেডেচভস্কি আরও বলেন, এই নির্বাচনে গণতন্ত্র বিজয়ী হবে বলে তার আত্মবিশ্বাস রয়েছে। বাংলাদেশ আর ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দুটি পক্ষ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একটি গঠনমূলক এবং ভারসাম্যপূর্ণ অংশীদারিত্ব এখন প্রয়োজন।
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত ৪৭টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১১টি ইসলামী দলের উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক এবং স্টাডি সার্কেল লন্ডনের চেয়ারপারসন সৈয়দ মোজাম্মেল আলী বলেছেন, পশ্চিমা শক্তিগুলো যদি সতর্ক না হয়, তাহলে বাংলাদেশ মৌলবাদীদের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। সাম্প্রতিক গ্লোবাল গেটওয়ে সামিটকে বাংলাদেশি সরকারের প্রতি আস্থার ভোট হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থা না রাখলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই ধরনের সহায়তা দিত না বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধিসহ সকল প্রধান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কনভেনশনের পক্ষে বাংলাদেশ ছিল বলে উল্লেখ করেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের ড. রায়হান রশিদ। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি সামনে আনেন তিনি। তার মতে, এই ঘটনা মানবাধিকারের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থানকে প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশিদের জন্য সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্যই ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল এবং বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল বলে সম্মেলনে জানান বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। তাই এই দেশ মানবাধিকারবান্ধব না হয়ে পারে না বলে তিনি যুক্তি দেন। সম্মেলনে উপস্থিত সকলকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
মানবাধিকারের বিভিন্ন ক্ষেত্র, যেমন সামাজিক অধিকার, শিক্ষার অধিকার এবং শিশুদের অধিকারকে বাংলাদেশ সমুন্নত রেখেছে বলে সম্মেলনে জানান ড. মিজানুর রহমান। এর উদাহরণ হিসেবে ১ জানুয়ারি দেশে ৩৫ মিলিয়ন পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করার উদাহরণ সামনে আনেন তিনি। ভূ-রাজনৈতিক মানবাধিকারকে একটি নব্য-ঔপনিবেশিক পদ্ধতি বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো ছোট ও দুর্বল রাষ্ট্রকে চাপ দেয়ার জন্য এটি ব্যবহার করলে সার্বভৌম সমতার আন্তর্জাতিক নীতি লঙ্ঘিত হয়। বাংলাদেশ তার গণতান্ত্রিক অবকাঠামোকে আরও শক্তিশালী, সমৃদ্ধ এবং টেকসই করতে তার ইউরোপীয় মিত্রদের কাছ থেকে সমর্থন আশা করে বলে জানান ড. মিজানুর রহমান।
বাংলাদেশে একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধ চলছে, তা ভুলে গেলে চলবে না জানিয়ে ড. রায়হান রশিদ বলেন, ওই লড়াইয়ে এক পক্ষ পরাধীনতা বেছে নিয়েছে কিন্তু অন্য পক্ষ স্বাধীনতা বেছে নিয়েছে। এক পক্ষ সম-অধিকার বেছে নিলেও অন্য পক্ষ বেছে নিয়েছে অসম্মান। এক পক্ষ ধর্মনিরপেক্ষতা বেছে নিলেও অন্য পক্ষ বেছে নিয়েছে ধর্মীয় রাষ্ট্র। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশি ভোটারদের এর মধ্য থেকেই পক্ষ বেছে নিতে হবে বলে জানান তিনি।