বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা এলাকায় বলেশ্বর নদীতে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। প্রবল ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ১০ একর ধানি জমি। ঝুকির মধ্যে রয়েছে বেরিবাঁধের বাইরে থাকা শতাধিক পরিবার ও কয়েকশ একর জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ বেড়িবাঁধের গাবতলা নামক স্থানে মূল বাধের নিচে ১০০ফুট এলাকার বেশকিছু সিসি বøকও নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বুধবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত বলেশ্বরের ভাঙ্গনে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আরও ব্যাপক এলাকা জুড়ে বিশাল ফাটল ধরেছে।
ভাঙ্গনের খবরে শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত, নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল ইসলাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন।
এদিকে ৩৫/১ পোল্ডারের মূলবাঁধে এমন ভাঙ্গনের সৃষ্টি হওয়ায় শস্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খুব দ্রæত নদী শাসন না করলে, মূল বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জোয়ার ও ভাটির টানে ভাঙন শুরু হয়। মুহুর্তের মধ্যে প্রায় ১০ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা বারেক হাওলাদার বলেন, নদী ভাঙ্গনে কয়েকবার আমার জমি ভেঙ্গেছে। এবারের ভাঙ্গনে আমার পরিবারের প্রায় ৬ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী শাসন না হলেও, এই এলাকা মানুষের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
স্থানীয় বাসিন্দা হেমায়েত হাওলাদার, বিগত দিনে বলেশ্বর নদে ভাঙ্গনে আমরা প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এই নদীর ভাঙ্গনে, আবারও জমি-জমা হারানোর শঙ্কা রয়েছে। ভাঙ্গনের ফলে সাউথখালীর অনেকেই ভূমিহীন হয়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন। বলেশ্বর আমাদের শেষ করে দিয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, নদী শাসন করে আমাদের রক্ষা করা হোক।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, ভাঙন ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করছে। মূল বাঁধের নিচ থেকে প্রায় ১০০ ফুট ধসে গেছে। এছাড়াও বিশাল এলাকায় ফাঁটল ধরেছে। গাবতলা বাজার থেকে বাবলাতলা প্রাইমারী স্কুল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকায় স্থায়ী নদী শাসন প্রয়োজন। বালুর বস্তা ফেলে সাময়ীক রক্ষা পেলেও তা স্থায়ী হবে না বলে দাবি করেন এই জনপ্রতিনিধি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ভাঙ্গনের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। ভাঙ্গনরোধে বিকেল থেকে জিও ব্যাগে বালু ভরে ডাম্পিং শুরু করা হয়েছে। আপাতত এক হাজার ব্যাগ ডাম্পিংয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রয়োজনে আরো বাড়ানো হবে। ভবিষ্যতের জন্য নদীর শ্রোত ও অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
(২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাগেরহাটসহ উপকূলীয় জেলা। সরকারি হিসেবে ওই একদিনে প্রায় ৯‘শ ৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল কয়েকশ কোটি টাকার।তখন থেকে শরণখোলাবাসীর দাবি ছিল টেকসই বেরিবাঁধ নির্মান। গনমানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার গত ২০১৫ সালে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) নামে একটি প্রকল্পের অধীনে মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মান শুরু হয়। কিন্তু বেরিবাঁধের বাইরে থেকে যায় কয়েকশ পরিবার ও বিপুল পরিমান জমি। ভাঙ্গনের ফলে প্রতিনিয়ত-ই ওই জমি ও বাড়ি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। মূলবাঁধে ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে চিন্তার ভাজ পড়েছে শরণখোলাবাসীর কপালে।