ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট
বাগেরহাট:তিন জনের সংসারে সিনথিয়ার বাবাই ছিল একমাত্র ভরসা। সুন্দরবনের নদী-খালে ধরা মাছ বিক্রি করে যা পেত তাতেই চলত সংসার। অনেক টাকা পয়সা না থাকলেও, স্বামী কাছে ছিল এতেই আমার শান্তি ছিল। সে (শিপার হাওলাদার) তো চলে গেল, এখন আমাদের কি হবে। এই মেয়ে (সিনথিয়া) কে কিভাবে আমি মানুষ করব। জীবনটা অন্ধকারে ঢেকে গেল। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার পশ্চিম রাজাপুর স্বামীর বাড়িতে বসে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমনে নিহত হওয়া শিপারের স্ত্রী মোরশেদা বেগম।
২৩ বছর বয়সী মোরশেদা আরও বলেন, মেয়েটির বয়স মাত্র সারে পাঁচ বছর। একটি ঘর ছাড়া আমাদেরতো আর কিছু নেই। শ্বশুরেরও এই বাড়ি ছাড়া কোন জমি-জমা নেই। নিজের বাবাও বৃদ্ধ, তাকে চলতে হয় অন্যের উপর ভরসা করে। কয়েক মাস পরে মেয়েকে স্কুলে দিতে হবে। কিভাবে কি করব জানিনা।
২৭ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে ঝাকি জাল (খেওলা জাল) নিয়ে শিপারের বাবা সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তুলাতলা এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে নিখোজ হয় পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের ফারুক হাওলাদারের ছেলে শিপার হাওলাদার। নিখোজের চার দিন পরে ০১ অক্টোবর রবিবার সকালে ওই এলাকা থেকে শিপারের দেহ বিচ্ছিন্ন মাথার খুলি, শরীরের দুটি হাড় ও তার পরনে থাকা প্যান্ট-গেঞ্জি উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরবর্তীতে ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী তার দাফন শিপারের দাফন সম্পন্ন হয়।
এদিকে সুন্দরবনে বাঘ এবং কুমিরের আক্রমণে কেউ মারা গেলে তার পরিবারকে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত হলে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নিয়ম থাকলেও, শিপার হাওলাদার সেই সুবিধা পাবেন না। কারণ শিপার বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই সুন্দরবনে প্রবেশ করেছিলেন।
শিপারের বাবা ফারুক হাওলাদার ও ১৭ বছর বয়সী ছোট ভাই ফোরকান হাওলাদারও জেলে। তারাও সুন্দরবন থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছেলের এমন মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েছেন অসহায় বাবা ফারুক হাওলাদার। তিনি বলেন, শিপার সুন্দরবনে যাওয়ার আগেই আমি সাগরে গেছিলাম মাছ ধরতে। ৩০ সেপ্টেম্বর, শনিবার সাগর থেকে ফিরে শুনি চারদিন ধরে শিপার বাড়ি আসে না। ফোনও বাড়িতে রেখে গেছে। পরের দিন সুন্দরবনে অনেক খোজাখুজি করে আমার বাবার মাথার খুলি পেয়েছি। বাবা তো চলে গেছে, কিন্তু এখনও আমার নাতীর কি হবে! আপনারা যারা আছেন, তারা যদি একটু সহযোগিতা করেন তাইলেই হয়ত মেয়েটা বেঁচে থাকতে পারবে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বৃদ্ধ জেলে ফারুক হাওলাদার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ কামাল হোসেন তালুকদার বলেন, শিপার অনেক ভাল ছেলে। সে পাশ নিয়েই সুন্দরবনে যেত। বাড়ির পাশেই বন হওয়ায় হয়ত পাশ নেয়নি। এরপরেও মানবিক দৃষ্টিতে শিপারের পরিবারকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। কারণ শিপারের স্ত্রী ও সন্তানের বেঁচে থাকার মত কোন অবলম্বন নেই। গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে সুন্দরবন বন বিভাগ, উপজেলা পরিষদ, মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনসহ সকলের কাছে শিপারের পরিবারকে সহযোগিতার আবেদন করছি।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম কোস্ট নিউজের জেলা প্রতিনিধিকে জানান, শিপার বন বিভাগের পাশ না নিয়েই সুন্দরবনে প্রবেশ করেছিল। যার কারণে আমাদের পক্ষ থেকে তাকে কোন সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশ নিয়ে সুন্দরবনে গেলে আমরা তাকে আেইন অনুযায়ী সহযোগিতা করতে পারতাম। এজন্য সকল জেলে ও স্থানীয়দের পাশপার্মিট নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করার অনুরোধ করেন এই কর্মকর্তা।