চালের বাজারে সরকারি অভিযান, কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া, সবজির মৌসুমি সরবরাহ—প্রত্যাশা করা হয়েছিল, এসব কারণে বাজারে স্বস্তি আসবে। কিন্তু বাজারে গিয়ে ভোক্তার স্বস্তি মিলছে না। বছরের শুরুতে চালের দাম বেড়ে যাওয়াকে অস্বাভাবিক হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও ঢাকার বাজারে চালের দামে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। উল্টো গত এক সপ্তাহে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর চারটি বাজার ঘুরে দেখেছেন এই প্রতিবেদক। বাজার চারটি হলো মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও তালতলা ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট। এসব বাজারে দেখা গেছে, শীতের সবজির ভরা মৌসুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউসহ বেশ কয়েকটি সবজির দাম গত এক সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দামও। সাধারণত বছরের এ সময় সবজির দাম কম থাকে। কিন্তু এবার সবজির দাম এখনো বাড়তি।
বাজারে এখন কোনো অভিভাবক নেই। যে যেভাবে পারছে, দাম বাড়াচ্ছে। আর এতে কষ্ট পাচ্ছে কেবল আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দীর্ঘদিন ধরে ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসের হিসাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই মাসে গ্রাম-শহরনির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, অর্থাৎ এক বছর আগের চেয়ে অতিরিক্ত দামে মানুষকে খাদ্য কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতির তুলনায় সাধারণ মানুষের আয় তেমন বাড়েনি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলছে। তবে কোনো ব্যবস্থাই বেশির ভাগ পণ্যের মূল্য কমাতে পারছে না।
চালের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার পর খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার দাম কমাতে ব্যবসায়ীদের চার দিন সময় বেঁধে দেন। ১৭ জানুয়ারি চালের দাম আগের পর্যায়ে নিয়ে আসার এই নির্দেশে সায় দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরাও। এরপর চালের বিভিন্ন মোকামে ও বাজারে সরকারি অভিযান চলে, জরিমানা করা হয় অনেক ব্যবসায়ীকে। ফলে জেলাপর্যায়ে চালের দাম কিছুটা কমলেও ঢাকার বাজারে এর প্রভাব খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিম—তিন পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু বেঁধে দেওয়া দর কখনোই কার্যকর করা যায়নি। এর বাইরে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া আছে চিনি, ভোজ্যতেল ও রান্নার গ্যাসের (এলপিজি)। কিন্তু এসব পণ্যের বেশির ভাগই বিক্রি হয় বাড়তি দামে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য যাঁদের নিয়মিত বাজারে যেতে হয়, তাঁদের অনেকে বেশ কষ্টেই আছেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাজিদুল আলম গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে এখন কোনো অভিভাবক নেই। যে যেভাবে পারছে, দাম বাড়াচ্ছে। আর এতে কষ্ট পাচ্ছে কেবল আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষেরা।’
দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিম—তিন পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু বেঁধে দেওয়া দর কখনোই কার্যকর করা যায়নি।
বাজার পরিস্থিতি
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর চারটি বাজার ঘুরে এবং সেখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে বাজারে নির্দিষ্ট ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্বস্তির কোনো খবর নেই। এসব বাজারের বিক্রেতারা জানান, বছরের শুরুতে বাজারে চালের দাম যতটা বেড়েছে, তা এখনো খুব একটা কমেনি। খুচরা পর্যায়ে চালভেদে কেজিতে কেউ কেউ এক-দুই টাকা কম রাখছেন, তবে বেশির ভাগ বিক্রেতা আগের বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করছেন।
বিভিন্ন খুচরা বাজারে গতকাল মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৩-৫৫ টাকায়। এ ছাড়া মাঝারি মানের চাল (পাইজাম ও বিআর ২৮) প্রতি ৫৬-৬০ টাকা এবং সরু চাল (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) ৬৮ থেকে ৭৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের চালের দোকান আল্লাহর দান রাইসের স্বত্বাধিকারী এম এ আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে চালের দাম বেড়ে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। দাম কমার কোনো আভাস এখনো পাইনি।’