বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামীকাল শুরু। ইজতেমা দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ায় প্রথম পর্ব ইজতেমা সম্পন্ন করার জন্য জোবায়েরপন্থিদের দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা সা’দপন্থিরা। প্রথম পর্বের মুসল্লিরা দলে দলে আসতে শুরু করেছেন। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য ১৬০ একর এলাকা ছাড়াও তুরাগ নদীর আশপাশের এলাকাসহ শিল্পনগরী টঙ্গী সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তাবলীগ জামাতের বৃহত্তর মহাসমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামীকাল শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও আজ (বৃহস্পতিবার) আসরের নামাজের পর থেকেই বয়ান করা হবে ইজতেমা মাঠে আগত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে। ইজতেমা প্রথম পর্ব ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৩রা ফেব্রুয়ারি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে। ৪ দিন বিরতির পর দ্বিতীয় পর্ব ৯ই ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর থেকে ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে।
এবার শীত বেশি থাকায় কি সমস্যা হতে পারে এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ থেকে ৪০ জনের দল নিয়ে আসা মাওলানা মোহাম্মদ সায়েম জানান শীত থাকায় কোনো সমস্যা হবে না। এতে মুসল্লির সংখ্যা বেশি হবে। ইজতেমার দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আল্লাহর রাস্তায় যারা থাকবে তাদের ঝড় বৃষ্টি শীত কোনোটাই আটকাতে পারবে না।
গতকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা দল বেঁধে ইজতেমা মাঠে আসতে শুরু করেছে। তাদের একটাই মাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহ এবং রাসুলকে পাওয়া ও আখেরাতে সুখ-শান্তিতে থাকা। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ইজতেমা ময়দান ও তার আশপাশের এলাকায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গতকাল সকাল ১১টার দিকে ইজতেমা ময়দানের পাশে মন্নুু টেক্সটাইলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কন্ট্রোল রুমে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন বলেন, নিজেদের মধ্যে বিভাজন থাকলে ইজতেমায় আগ্রহ হারাবে। তাই ইজতেমায় কোনো পক্ষ বা বিভাজন থাকা উচিত নয়। এবারের ইজতেমা আয়োজনে জঙ্গি বা কোনো উগ্রবাদী সংগঠনের হুমকি নেই।
র্যাব শুধু নিরাপত্তাই নয়, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবাও দেবে। এ ছাড়া তুরাগ নদীতে টহলের জন্য র্যাবের স্পিডবোট থাকছে। ৯টি অবজারভেশন পোস্ট, ৯টি ওয়াচ টাওয়ার সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। পুরো ময়দান পর্যবেক্ষণের জন্য আকাশপথেও টহলে র্যাবের হেলিকপ্টার চলছে। তাছাড়া র্যাবের বোম্ব স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড ও স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করছে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য রয়েছে একটি মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও দুটি উপ-নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এবারের ইজতেমা ময়দানে নির্বিঘ্নে শেষ করতে র্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমাকে উপলক্ষ করে ঢাকা জেলা ও গাজীপুর জেলা প্রশাসন লাখো মুসল্লিদের নিরাপত্তা দিতে পাঁচ স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থা করেছেন। গাজীপুর মেট্রোর পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম বিপিএম পিপিএম (বার) জানান, এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যরা গত এক সপ্তাহ থেকেই ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তার কাজ শুরু করেছেন। দুই পর্বেই পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, আনসার ব্যাটালিয়নসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থানের জন্য টঙ্গীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও প্রতিষ্ঠানসমূহে জায়গা করা হয়েছে। এতে করে টঙ্গীর স্কুল-কলেজও ছুটি দেয়া হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে।