দৈ. কি.ডেস্ক : দেশে ব্যবসার পরিবেশ যে ভালো নেই, এ তথ্য নতুন নয়। মঙ্গলবার রাজধানীর এফবিসিসিআই ভবনে আয়োজিত এক সংলাপে উঠে আসা তথ্যও একই কথা বলছে। বক্তাদের তথ্যমতে, দেশে শিল্পকারখানা স্থাপন বা ব্যবসা শুরু করতে ১৭ থেকে ১৯ ধরনের সনদ (লাইসেন্স) লাগে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর), বিআইএনসহ (ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর) ব্যবসাসংক্রান্ত সনদও। এসবের সঙ্গে একাধিক সরকারি দপ্তর যুক্ত থাকায় সব শ্রেণির শিল্পোদ্যোক্তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবার সনদ নবায়নে সরকারি ফির তুলনায় ক্ষেত্রবিশেষে ঘুস দিতে হয় ৬ গুণেরও বেশি।
সরকারের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নকারী কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি এবং ঘুস বাণিজ্য দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের অন্তরায়। উদ্বেগজনক হলো, কেবল লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষই নয়, দেশের অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার বেশির ভাগই অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুসের আখড়ায় পরিণত হয়েছে, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। বেশিদিন আগের কথা নয়, দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুস, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা-এ তিন ধরনের বাধার কথা উল্লেখ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর) প্রকাশিত ২০২৪ সালের বৈদেশিক বাণিজ্যে বাধাবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। বস্তুত এদেশে উদ্যোক্তাদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। ঘুস না দিলে ফাইল আটকে রাখা হয়, আরোপ করা হয় নিয়মের অতিরিক্ত কর। রয়েছে আরও নানা জটিলতা, যা নতুন ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়াকেও করে প্রলম্বিত। এসব কারণে নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহবোধ করেন না। অথচ এমনটি হওয়ার কথা নয়। প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেশে সহজে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বড় বাধা এখনো। শিল্পায়ন ও দেশীয় শিল্পের বিকাশের জন্য সরকারের উচিত অবিলম্বে এসব দিকে দৃষ্টি দেওয়া। সনদ গ্রহণ, নবায়ন পদ্ধতি পুরোপুরি অটোমেটেড করতে পারলে সময় ও অর্থ দুটিরই সাশ্রয় হবে বলে মনে করি আমরা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মতো যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা সহজীকরণে কাজ করছে; তাদের সনদ প্রদান-নবায়ন, ভ্যাট-ট্যাক্সের জটিলতা এবং হয়রানিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
বর্তমানে মূল্যস্ফীতি, ডলার ও তারল্য সংকট ব্যবসার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এর ওপর গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে দুর্নীতি। কাজেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; প্রণয়ন করতে হবে সঠিক নীতিমালা। এদেশে ব্যবসার আরেক প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অর্থায়ন। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে ঋণের সুদহার অনেক। মূলত অনাদায়ি ঋণের কারণে সুদহার কমানো যাচ্ছে না। এর দায় নিতে হচ্ছে শিল্পোদ্যোক্তাদের। আবার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদেরও ঋণ গ্রহণে সমস্যার মুখে পড়তে হয়। ভুলে গেলে চলবে না, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতির উন্নতি হলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, দৃঢ় হবে দেশের অর্থনীতির ভিত। ব্যবসার পরিবেশ উন্নত হলে উন্নয়নশীল এবং পরবর্তী ধাপে উন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার পথটিও মসৃণ হবে। কাজেই সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করে প্রকৃত ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।