দৈ. কি.ডেস্ক : সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা থেকে পিছু হটছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর পর্ষদ যৌথভাবে সিদ্ধান্ত না নিলে আপাতত বাধ্যতামূলকভাবে কোনো সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করা হবে না। তবে সরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সরকারই নেবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু করবে না। ফলে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক অপর বেসরকারি ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় শনিবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হচ্ছে, নাকি তা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা আগে থেকেই সংশয় প্রকাশ করছিলেন। ব্যাংক-কোম্পানি একত্রীকরণের যে নীতিমালা বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, একীভূত ব্যাংকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তারল্য সুবিধাই শুধু পাবে না, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার অনুযায়ী অন্যান্য সহায়তাও পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি ছিল, এই নীতি সহায়তাকে কাজে লাগিয়ে দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একত্রীকরণ থেকে লাভবান হতে পারবে দুর্বলদের দায়িত্ব নেওয়া ব্যাংকগুলো। তবে এসব সুবিধার বিপরীতে খারাপ ব্যাংকের দায় নিয়ে ভালো ব্যাংকগুলোকে যে আরও নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, তা আগেই বোঝা উচিত ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, বিষয়গুলো বিবেচনায় না নিয়ে কেন এমন হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক? এরই মধ্যে যেসব ব্যাংক একীভূত হয়েছে, তারা যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, তাদের কী হবে?
আমরা মনে করি, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিয়ে একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনবে না। কারণ, একীভূতকরণের মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোর উচ্চ খেলাপি ঋণ, কম দক্ষতা ও সুশাসনের অভাব রাতারাতি ঠিক হয়ে যাবে না। বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ঋণখেলাপিদের নাম প্রকাশ করতে বাধ্য করে তাদের সামাজিকভাবে লজ্জায় ফেলতে হবে। তা না করে একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণ করা হলে ঋণখেলাপিদের তো শাস্তি হবেই না, কোনো পরিচালক বা ব্যাংক কর্মকর্তাকেও আইনের মুখোমুখি হতে হবে না।
আমরা বারবার বলে আসছি, দেশের ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতির পেছনে যে কয়েকটি কারণ রয়েছে, তার মধ্যে সুশাসন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকট অন্যতম। এসব কারণে ব্যাংকগুলো ক্রমেই দুর্বল হয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। খেলাপিরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে এর একটি বড় অংশ যে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে, তা ওপেন সিক্রেট। এর ফলে অর্থনীতিতে বাস্তবে অর্থ থাকছে না, জিডিপিতে দেখানো হলেও বাস্তবে এই অর্থ দেশে নেই। অন্যদিকে ফেরত না আসা বিপুল পরিমাণ অর্থ খেলাপি হওয়ার কারণে প্রভিশন রাখাও ব্যাংকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এতে ব্যাংকের আটকে যাচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ।
এ জন্য খেলাপিদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। ভুলে গেলে চলবে না, ব্যাংক হচ্ছে অর্থনীতির প্রাণ। ব্যাংক দুর্বল হলে অর্থনীতিও দুর্বল হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া ও ঋণ আদায় করা অনেকটাই অসম্ভব। তাই ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং গতিশীল অর্থনীতির জন্য শুধু ব্যাংক একীভূতকরণ নয়, বরং সুশাসন ও খেলাপিদের কঠোর সাজার ব্যবস্থা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্যোগী হবে, এটাই প্রত্যাশা।