দৈ. কি. ডেস্ক: ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও কংগ্রেস-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিতর্ক জিইয়ে রাখলেন। গত রোববার রাজস্থানের বাঁশবাড়ায় যা বলেছিলেন, আজ সোমবার উত্তর প্রদেশের আলিগড়েও সেই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বললেন, ক্ষমতায় এলে ওরা আপনাদের কষ্টার্জিত সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে বিলিয়ে দেবে। সে জন্য দরকার হলে আইন করবে তারা।
কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক পাঞ্জার বিষয় উল্লেখ করে জনতার উদ্দেশে মোদি বলেন, ওই হাত আপনাদের সম্পত্তির ওপর থাবা বসাবে। আপনাদের সম্পত্তি আর আপনাদের থাকবে না। পাবে তারা, যারা অনুপ্রবেশকারী। যারা শুধু বেশি বেশি সন্তানের জন্ম দেয়।
কংগ্রেসকে এভাবে আক্রমণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা স্রেফ কথার কথা নয়। ওদের নির্বাচনী ইশতেহারেই এসব কথা বলা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এক ভাষণেও এসব কথা বলেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা পড়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আজ সোমবার চিঠি লিখে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে দেখাও করে0
সেই সাক্ষাতের পর কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভি বলেন, একেবারে সরাসরি সাম্প্রদায়িক প্রচার করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি একটি সম্প্রদায়কে অনুপ্রবেশকারী বলেছেন। হিন্দু নারীর মঙ্গলসূত্র নিয়ে মন্তব্য করছেন। যা যা তিনি বলেছেন, সবকিছু কমিশনের বেঁধে দেওয়া আচরণবিধির লঙ্ঘন।
কিন্তু ইসি নির্বাক। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে একটি শব্দও তারা উচ্চারণ করেনি। আজ সোমবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই এ বিষয়ে ইসির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সংস্থার এক কর্তা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
বিতর্ক অব্যাহত থাকায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে সময় চেয়েছেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, নির্বাচনী ইশতেহারে কী কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, খাড়গে তা প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চান। তাঁকে শিক্ষিত করতে চান। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী নেতাকে সেই সুযোগ দিচ্ছেন কি না, তা জানা যায়নি।
গত রোববার রাজস্থানে কংগ্রেস ও মুসলমানদের একাসনে বসিয়ে আক্রমণ শাণিয়ে মোদি বলেছিলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে কংগ্রেস বলেছে, ক্ষমতায় এলে তারা জনগণের সম্পত্তির হিসাব নেবে। কার কাছে কত সোনা–রুপা আছে দেখবে। তারপর তা মুসলমানদের মধ্যে বিলি করে দেবে।
মনমোহন সিংয়ের নাম করে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তিনিও এক ভাষণে সে কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, দেশের সম্পদের অধিকারী সবার আগে মুসলমানেরা। এর পরেই প্রধানমন্ত্রী জনতার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাঁরা কি চান তাঁদের সম্পদ এমনকি মা–বোনেদের গলায় থাকা মঙ্গলসূত্রও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিলি–বাঁটোয়ারা হোক? যারা গাদা গাদা সন্তান উৎপাদন করে তাদের বিলিয়ে দেওয়া হোক?
গতকাল রোববার বলা ওই বক্তব্যে বিরোধীরা সরব হলেও আজ সোমবার আলিগড়ে মোদি ফের ওই কথার পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, কংগ্রেস যে ওই কাজ করবে, তা তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেই জানিয়ে দিয়েছে। ধন শুধু নারীর প্রাপ্যই নয়। আইন করে সেই অধিকার বিবাহিত নারীদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস বলেছে, সেই আইনই তারা বদলে দেবে। মানুষের রোজগার কত তা তারা জরিপ করে দেখবে। কার কত জমি আছে, কটা গাড়ি আছে দেখবে। তারপর তা দখল করে বিলি করে দেবে।
মোদি আরও বলেন, আপনাদের পৈতৃক বাড়ি চলে যাবে। গ্রাম শহরের জমি চলে যাবে। এটা মাওবাদীদের, কমিউনিস্টদের চিন্তাধারা। কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোট সেই চিন্তাধারা এ দেশে চালু করতে চায়।
গতকাল রোববারই প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণের সমালোচনা করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে, রাহুল গান্ধী, জয়রাম রমেশ, পবন খেরা, অখিলেশ যাদব, আসাউদ্দিন ওয়েইসিরা।
আজ সোমবার মোদির ভাষণ ‘খোলাখুলি সাম্প্রদায়িক’ বলে তীব্র সমালোচনা করেন কংগ্রেসের শশী থারুর ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদব। থারুর বলেন, এটা খোলাখুলি সাম্প্রদায়িক প্রচার। যেকোনো সভ্য দেশের নির্বাচন কমিশনের উচিত এই ধরনের বিবৃতি দেওয়া বা ভাষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে থারুর জানতে চান, ৬৫ বছর কংগ্রেস দেশ শাসন করেছে। কখনো কি তারা জনগণের সম্পত্তি জবরদস্তি কেড়ে নিয়ে মুসলমানদের কাছে বিলি করেছে? প্রধানমন্ত্রী কীভাবে এমন কথা বলতে পারেন, তাই ভাবছি। যে কথা তিনি বলে চলেছেন, তা দুর্ভাগ্যজনক ও হতাশজনক।
তেজস্বী যাদব প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, হাত জোড় করে বলছি, অনুগ্রহ করে সেসব বিষয়ের কথা বলুন, দেশের মানুষ আপনার কাছ থেকে যা জানতে চায়। তারা জানতে চায় চাকরি কবে হবে। মূল্যবৃদ্ধির ছোবল কবে কমবে। কৃষকদের আয় কবে বাড়বে। ফসলের ন্যায্যমূল্য কবে পাবে। মানুষের জেরবার অবস্থা কবে শেষ হবে।
বিজেপি অবশ্য মোদির বক্তব্য সমর্থন করছে। দলের মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া আজ সোমবার বলেন, যা সত্য, প্রধানমন্ত্রী তা–ই বলেছেন। তিনি সাদাকে সাদা বলেছেন। কংগ্রেসের মুখের সামনে আয়না ধরেছেন।
মোদির মন্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানিয়ে বহু আবেদন নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা পড়েছে। কিন্তু আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি কথাও বলেনি কমিশন।
সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্যসভার সদস্য কপিল সিব্বাল সোমবার বলেন, রাজনীতি এতটা নোংরা ও এতখানি নিচে কখনো নামেনি। প্রশ্ন একটাই, নির্বাচন কমিশন এখনো কেন নির্বাক? এখনো কেন প্রধানমন্ত্রীকে নোটিশ পাঠানো হয়নি?