ডেস্ক: কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেঘনা নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় পর্যটকবাহী ট্রলারডুবির ঘটনায় নারী, পুরুষ, শিশুসহ আটজন নিখোঁজ রয়েছেন। এর মধ্যে কনস্টেবল সোহেল রানা, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিখোঁজ রয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব প্রান্তে মেঘনা নদীর তীরে ত্রি সেতুর পাড়ে আজ শনিবার বসে ছিলেন তরুণী মারিয়া ভূঁইয়া। দৃষ্টি মেঘনা নদীতে। এখানেই গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বাল্কহেডের ধাক্কায় পর্যটকবাহী নৌকাডুবিতে মারিয়ার চোখের সামনে ডুবে যান তাঁর মামা ভৈরব হাইওয়ে থানার কনস্টেবল সোহেল রানা, মামি মৌসুমি বেগম, সাত বছর বয়সী মামতো বোন ইভা ও চার বছর বয়সী মামাতো ভাই রাইসুল ইসলাম। ডুবতে ডুবতে বেঁচে ফিরেছেন মারিয়া। কিন্তু চোখের সামনে চার স্বজনের পানিতে ডুবে যাওয়ার মর্মান্তিক দৃশ্য কোনোভাবেই ভুলতে পাচ্ছেন না তিনি।
দুর্ঘটনার পর মারিয়ার ওই চার স্বজন নিখোঁজ আছেন। তাঁদের সন্ধান পাওয়ার আশায় মেঘনা নদীর তীরে বসে আছেন মারিয়া। আজ সকালে ভৈরব প্রান্তের ত্রি সেতু পাড় এলাকায় কথা হয় মারিয়ার সঙ্গে। দুর্ঘটনার মুহূর্ত স্মরণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মারিয়া বলেন, ‘পানিতে পড়ে যাওয়ার পর ইভা আর রাইসুল আমাকে ধরে ছিল। আমিও ডুবে যাচ্ছিলাম। মুহূর্তেই দেখি, তারা আমাকে ছেড়ে দিয়েছে, ডুবে যাচ্ছে। মামা-মামি নৌকার ভেতরে আটকা পড়ে। তাঁরা আর বের হতে পারেননি। একপর্যায়ে আমাকে কে বা কারা তীরে নিয়ে আসেন।’
চোখ মুছতে মুছতে মারিয়া বলেন, সাত মাস আগে মামা (সোহেল রানা) ভৈরব হাইয়ে থানায় কনস্টেবল পদে যোগ দেন। পরিবারের লোকজন নিয়ে ভৈরবে থাকতেন। মামার বাসায় বেড়াতে দুই সপ্তাহ আগে তিনি ভৈরব আসেন। গতকাল মামার প্রস্তাবে তাঁরা সবাই নৌকা করে ঘুরতে গিয়েছিলেন।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর মারিয়া বলেন, দুর্ঘটনাটি ঘটে তীরে ফেরার কয়েক মিনিট আগে। আর দুই থেকে তিন মিনিট সময় পেলে নৌকাটি তীরে পৌঁছে যেত। তখন সেতুর এক পাশে ছিল নৌকাটি। অপর পাশ থেকে আসছিল বাল্কহেডটি। বাল্কহেডটি সেতুর পিলারের কারণে কিছুটা সময় অদৃশ্য ছিল। হঠাৎ করে বাল্কহেডের সামনে পড়ে যায় নৌকাটি। এ সময় বাল্কহেডের ধাক্কায় তাঁদের বহনকারী নৌকাটি উল্টে যায়।
এদিকে নদীর পাড়ে ভোর থেকে নিখোঁজদের সন্ধানে অপেক্ষা করছেন স্বজনেরা। এর মধ্যে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ কনস্টেবল সোহেল রানার পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরাও রয়েছেন। উদ্ধার কাজ চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া যায়নি কনস্টেবল সোহেল রানা ও তার পরিবারের সদস্যদের। এ নিয়ে তার পরিবারে চলছে আহাজারি। স্বজনহারা মানুষদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে মেঘনার তীর।
কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে সোহেল রানা ২০১১ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পান। বর্তমানে ভৈরব হাইওয়ে থানায় কর্মরত আছেন তিনি।
ভৈরব হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজু মিয়া জানান, ট্রলারডুবির ঘটনায় তার থানার কনস্টেবল সোহেল রানাসহ পরিবারের সদস্যরা নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছে পরিবার।