বিশেষ প্রতিনিধি
পুরো দেশ এখন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইতিমধ্যেই
নির্বাচনী ট্রেনে যাত্রা করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী মাঠ গোছানোর পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরছেন দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে আরেকবার দেশ পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার আহবান জানাচ্ছেন। ইতিমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে। এবারের মূল শ্লোগান হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার।
অপরদিকে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় দলীয় সভানেত্রী, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়েছেন। গত রবিবার জাতীয় সংসদে জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভা থেকে শেখ হাসিনা এই বার্তা দেন।
মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ এখন পুরোদস্তুর মাঠে নেমেছে। ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা, মহানগর পর্যায় সর্বত্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচালনা শুরু করেছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হতে আগ্রহী আওয়ামী লীগের এমন সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহেদুজ্জামান আনসারী মনাই বলছিলেন, ইতিমধ্যে আমাদের নির্বাচনী কার্যক্রম ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বত্র বিস্তৃীত করা হয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্যসহ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গ্রামে গ্রামে গণসংযোগ করছেন।
তিনি জানান, ইতিমধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে ওয়ার্ড কমিটি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করবে তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। পোলিং এজেন্ট তৈরি তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজেও আমরা হাত দিয়েছি।
শাহেদুজ্জামান আনসারী আরো জানান, একাধিক প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা চালালেও দল ও দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তারে পক্ষে একজোট হয়ে কাজ করবেন।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা জানিয়েছেন, দল এখন পুরোপুরি নির্বাচনমুখি। ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ধ্যানেজ্ঞানে এখন নির্বাচন। দলের ভিতরে সকল ভেদাভেদ , বিরোধ ভুলে গিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে মাঠে নেমেছেন।
মুক্তা জানান, ইতিমধ্যে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গ্রামে গ্রামে জনসংযোগ করছেন। সরকারের গত ১৫ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরছেন। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে মাঠ পর্যায়ের এই নেতা বলেন, গত ১৫ বছরে সুনামগঞ্জে যে উন্নয়ন হয়েছে সেটি চোখে পড়ার মত। যেখানে রাস্তাঘাট ছিলো না সেখানে রাস্তাঘাট হয়েছে, ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে। মানুষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুবিধা ভোগ করছে। এসব কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি, নৌকার প্রতি এবং শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের ভালোবাসা তৈরি হয়েছে।
মুক্তা জানান, নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলেও সুনামগঞ্জের কোনো কোনো উপজেলায় এখনও দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। নির্বাচনের আগে এসব উপজেলায় দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার উপর গুরুত্ব দেন তিনি।
বাংলাদেশ কৃষক লীগের যুগ্ম-সাদারণ সম্পাদক ও সিলেট-সুনামগঞ্জের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শহারিয়ার বলছিলেন,আমরা পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় আছি। গ্রামে গ্রামে, ঘরে গরে মানুষের কাছে যাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সরকারের গত ১৫ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন। মানুষকে একটা বার্তাই আমরা দেওয়ার চেষ্টা করছি, উন্নয়নের ধারবাহিকতা চান তো আবারও আওয়ামী লগিকে নির্বাচিত করুন, জননেত্রী শেখ হাসিনা জয়ী করুন। এর কোনো বিকল্প নেই।
আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, বিশেষ করে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, ভূমিহীনদের জমি ও ঘর দেওয়াসহ মোটা দাগে যেসব উন্নয়ন হয়েছে সেগুলো আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরছি। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের দুর্নীতি, দুর্নীতিতে বার বার চ্যাম্পিয়ান হওয়া, বিগত ২০১৩-২০১৪ সালে বিএনপি জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও করেছে, সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে সেই বিভৎস ঘটনাগুলোও আমরা তুলে ধরছি।
শামীমা শাহরিয়ার বলেন, নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই নৌকার প্রার্থী দিবেন তার পক্ষেই মাঠের নেতাকর্মীরা কাজ করবেন। যদিও এখন অনেক প্রার্থী প্রচারণ প্রচারনা চালাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনী ট্রেন এখন প্রস্তুত । আওয়ামী লীগ সেই ট্রেনের যাত্রী হয়ে ইতিমধ্যে দেশব্যাপী নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে। দলের নেতাকর্মীদেরকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের বিভৎস কর্মকাণ্ডের কতাও জনগণের সামনে তুলে ধরতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সবাইকে নির্বাচনী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার দলের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সবাইকে নির্বাচনী কাজে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন এমন প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে। যাদের নামে অভিযোগ আছে, যারা এলাকায় বিতর্কিত তারা মনোনয়ন পাবেন এমন ইঙ্গিত করে তিনি দলীয় সংসদ্যদের বলেছেন, বিভেদ ভুলে সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ করতে হবে।জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানামুখি ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ সরকারপ্রধান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সবাইকে জিতে আসতে হবে। কমপক্ষে ৬০ শতাংশ ভোটারকে কেন্দ্রে উপস্থিত করতে হবে।