সম্পাদকীয়:
কথায় বলে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। দেশের যুবসমাজের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ বেকার। এমনকি বেকারের তালিকায় উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই অধিক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে ১০০ জন বেকারের মধ্যে ৪৭ জনই স্নাতকধারী। আবার যাহাদের বেকারমুক্ত বলিয়া ধরা হইতেছে, সেইখানেও আছে শুভংকরের ফাঁকি। তাহাদের অধিকাংশের কর্মসংস্থান অনানুষ্ঠানিক খাতে ও অস্থায়ী। ফলে লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীর বেকারত্বের সুযোগকে কাজে লাগাইয়া তাহাদের মধ্যে মাদকের আসক্তি ছড়াইয়া দেওয়া হইতেছে সুকৌশলে। বর্তমানে দেশের মাদকসেবীদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শুধু ছেলেরা নহে, বর্তমানে মেয়েরাও প্রবেশ করিতেছে এই অন্ধকার জগতে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ছাদ, হলের রুম অথবা খেলার মাঠগুলিতে চলে মাদকের আড্ডা। শখের বসে, আড্ডার আসর জমাইতে কিংবা প্রেমে ব্যর্থ হইয়া মাদক সেবন করিতেছে তাহারা। কম মূল্য ও সহজলভ্য হওয়ায় শিক্ষাঙ্গনেই মিলিতেছে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে এইভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলিয়া দেওয়া যায় না।
তরুণদের বেকারত্বের অভিশাপ হইতে মুক্ত করিতে হইলে তাহাদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করিতে হইবে। অলস সময় কাটাইবার অবকাশ না পাইলে তাহারা আর ভুলপথে পা বাড়াইবে না। এই কথা সত্য যে, সারা পৃথিবীতেই মাদকের আগ্রাসন বাড়িতেছে। উন্নত দেশগুলিও মাদক সম্রাটদের মোকাবিলায় হিমশিম খাইতেছে; কিন্তু আমাদের দেশে যেইভাবে প্রকাশ্যে মাদকের ক্রয়বিক্রয় চলিতেছে তাহা উদ্বেগজনক। মাদক এখন মোবাইলে ফোন করিয়াও ক্রয় করা যায়। পাওয়া যায় অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল তথা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত মাদকের ছড়াছড়ি লক্ষ করা যাইতেছে। তাহা হইলে আমাদের প্রশ্ন, সেইখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা মেম্বার-চেয়ারম্যান, মেয়র-কাউন্সিলরা কী করিতেছেন? কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাহাদের মাদক ব্যবসায়ে জড়াইয়া পড়িতে দেখা যায়। এমনকি প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহিত তাহাদের অনৈতিক যোগসাজশ গড়িয়া উঠে। পয়সা দিয়া সকলকে তাহারা ম্যানেজ করিয়া থাকে এবং মাদকের সেই ব্যবসায় হইতে প্রাপ্ত অবৈধ অর্থ রাজনৈতিক সিদ্ধি হাসিলে ব্যবহার করে। মাদকের এই নেটওয়ার্ক ভাঙিয়া দিতে হইবে। এই জন্য সংশ্লিষ্ট থানাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের তত্পরতা বাড়াইতে হইবে।
তরুণদের মাদকাসক্তি দূর করিতে হইলে মেধার ভিত্তিতে চাকুরি পাওয়া নিশ্চিত করিতে হইবে। একমাত্র প্রতিরক্ষা ছাড়া প্রায় সর্বত্র চাকুরি পাইতে টেলিফোন বা সুপারিশের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, যাহা হতাশাজনক। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে যেইখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলিয়া যাইতেছে, সেইখানে মাদকের সহজলভ্যতা দুঃখজনক। আজকাল পাড়া-মহল্লা তো বটে, জেলহাজতেও অতি সহজেই মিলিতেছে মাদকদ্রব্য। মাদকের কারণে বাড়িতেছে পারিবারিক কলহ ও সামাজিক অস্থিরতা। তাই এই ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত রাখিতে হইবে। মাদকের গডফাদারদের আটক করিয়া আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হইবে। ইহা ছাড়া সরিষার ভিতরে ভূত রাখিয়া ভূত তাড়ানো যায় না। এই জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক দলসহ সর্বত্র শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করিতে হইবে।