ঢাকা২৭ জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  1. ! Без рубрики
  2. Echt Geld Casino
  3. test2
  4. অপরাধ
  5. অর্থনীতি
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আরো
  8. এক্সক্লুসিভ
  9. খেলাধুলা
  10. জাতীয়
  11. তথ্য প্রযুক্তি
  12. দেশজুড়ে
  13. প্রেস বিজ্ঞপ্তি
  14. বাণিজ্য
  15. বিনোদন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মানবপাচার রোধে আরো কঠোর হতে হবে

admin
মার্চ ১৭, ২০২৪ ৪:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মানব পাচারের ক্ষেত্র হিসেবে দুনিয়াজুড়ে পরিচিত হয়ে উঠছে বাংলাদেশের নাম। এ ঘৃণ্যতম অপরাধে কারা জড়িত তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা নয়। জনপ্রতিনিধি ও সমাজনেতাদেরও তা জানা। কিন্তু অধঃপতিত এ সমাজে সৎ মানুষের চেয়ে অসতের কদর ও কৃতিত্ব বেশি। ফলে মানব পাচারকারীরা প্রকাশ্যেই চালায় তাদের তৎপরতা। সারাদেশে এমন শকুনদের অপতৎপরতা রয়েছে। তবে মাদারীপুরসহ দেশের কিছু এলাকায় পাচারকারীদের জাল বিছানো ব্যাপকভাবে।

লিবিয়া হয়ে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পাঠানোর ‘মরণযাত্রা’র জন্য মাদারীপুরে রয়েছে বেশ কয়েকটি দালাল চক্র। তারা জেলার বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে নিয়ন্ত্রণ করে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে তারা। ইতালি পাঠানোর কথা বলে তারা জনপ্রতি ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। এসব দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে মানুষ তাদের জমিজমা বিক্রি করে দিচ্ছে। ঢাকা ও দুবাইয়ে অবস্থান করে লিবিয়া-বাংলাদেশে নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করা চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানীয় দালালরা। ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে প্রথমে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে দালালরা বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে লিবিয়া পাঠায়। এরপর সেখান থেকে নৌপথে ইউরোপের ইতালি পাঠানোর কথা বলে। বাস্তবে বহু ক্ষেত্রে ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর বিদেশগামীরা স্থানীয় মাফিয়া চক্রের খপ্পরে পড়ে। টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার পাশাপাশি অনেককেই প্রাণ হারাতে হয় ভূমধ্যসাগরে। কৌশলে আরও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য লিবীয় মাফিয়া চক্রের কাছে বিদেশগামীদের ধরিয়ে দেয় দেশি দালাল চক্র। মাফিয়ারা তাদের লিবিয়ার বিভিন্ন টর্চার সেলে নিয়ে বন্দি করে রাখে। সেখানে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তারপর ১০-১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বিদেশবিভুঁইয়ে হারাতে হয় প্রাণ। লিবিয়ায় কার্যত কোনো আইনশৃঙ্খলা নেই। ফলে মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র পাচারের পর মানবপাচার হচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরাধমূলক কার্যক্রম। মানবপাচারের সঙ্গে প্রথম দুটি অপরাধও প্রায়ই জড়িয়ে থাকে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রগুলোর সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল কার্যক্রম হচ্ছে মানবপাচার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও এই অপকর্মের জন্য ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় কিংবা একটু উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় মানুষ অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশগুলোতে পাড়ি জমায়। ভালো চাকরি, লোভনীয় সুযোগ-সুবিধার কথা বলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আকৃষ্ট করে। তারপর টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে তাঁদের ঠেলে দেয় ভয়ংকর বিপদের মুখে। জীবনও দিতে হয় অনেককে।

ভূমধ্যসাগরে বহু ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। বহু বাংলাদেশির সলিলসমাধি হয়েছে। অনেকে সাগরে ভাসতে ভাসতে পানীয় জল ও খাবারের অভাবে মারা গেছে। শুধু তা-ই নয়, অনেককে লিবিয়ার মরুভূমিতে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ভিডিও পরিবারকে দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। এমন ঘটনা ঘটে অন্যান্য গন্তব্যেও। নৌকায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে অনেকেরই সলিলসমাধি হয়েছে। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বাংলাদেশিদের বহু গণকবরেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। তারপরও এমন ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিদেশে পাড়ি জমানো বন্ধ হয়নি।

২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে শুধু ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ছয় লাখের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী ইউরোপে প্রবেশ করেছে। এ সময়ে প্রায় ১৫ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। ব্যাপক সংখ্যায় অভিবাসনপ্রত্যাশীর আগমনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নানা রকম সংকট তৈরি হচ্ছে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসনবিরোধী তৎপরতা শুরু হয়েছে। যুক্তরাজ্যে নৌপথে পাড়ি দেওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফিরিয়ে দিতে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বাংলাদেশকে চাপ দেওয়া হচ্ছে অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য এবং মানবপাচার বন্ধ করার জন্য। বাংলাদেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেও। অবৈধ অভিবাসনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার বন্ধ করতে হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক ভাঙতে হবে। তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আর সেই কাজটি করতে হবে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকেই।
যতই দিন যাচ্ছে, বাড়ছে মানব পাচার। মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনওডিসি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত প্রথম জাতীয় মানব পাচারবিষয়ক গবেষণায় দেখা যায়, মানব পাচারের শিকার মানুষের বেশির ভাগই অত্যন্ত গরিব এবং জীবিকার তাগিদে এ পথে পা দেয়। বিশেষ করে পাচারকারীরা রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা; বান্দরবান, কিশোরগঞ্জ, মাগুরা ও জামালপুর জেলার বাসিন্দাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে বিদেশে পাচার করে থাকে।

বৈধভাবে বিদেশে যেতে অনেক অর্থ খরচ করতে হয়। পাচারকারীরা দরিদ্র মানুষকে কোনো টাকাপয়সা ছাড়াই বিদেশে নিয়ে যায় চাকরি দেওয়ার নাম করে। এর আগে ইউএনওডিসির ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ৫১ শতাংশ মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে পাচারকারীদের ফাঁদে পা দেয়। বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে বেশি মানুষ পাচার হয়, সেগুলো হলো পূর্ব আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। পাচার হওয়া মানুষগুলো সেখানে কেবল দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে বাধ্য হয় তা-ই নয়, অনেকে জিম্মিও হয়ে পড়ে। দেশে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে থাকে পাচারকারীরা। তারা মেয়েদের যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করে।

বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারের কারণ ও ঝুঁকি চিহ্নিত করার পাশাপাশি ওই প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে অপরাধ দমনে শক্তিশালী প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলা, ভুক্তভোগীদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা, মানব পাচার ও জোর করে শ্রম বন্ধ করতে কৌশলপত্র প্রণয়ন। পাচার রোধে বক্তৃতা-বিবৃতি, গবেষণাই যথেষ্ট নয়। সরকারকে দ্বিমুখী কার্যক্রম জারি রাখতে হবে। এক. যাতে পাচার না হতে পারে সে জন্য সীমান্তে কঠোর পাহারা, দুই. পাচারকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশে মানব পাচারবিরোধী কঠোর আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই।

মানব পাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধ প্রতিরোধের দায়িত্ব মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। বিমান, নৌপথ কিংবা সড়কপথে যাতে কেউ পাচার করতে না পরে, সে জন্য সীমান্তরক্ষীদের সদাসতর্ক থাকতে হবে। আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে মানব পাচারের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক সচেতনতাও। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মানব পাচারের ঘটনায় আসামি ধরা পড়লেও বিচার হয় না। শাস্তি পায় না। আমরা যদি পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারি, মানব পাচার চলতেই থাকবে।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ সরকার মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ভালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে এবং পাচারের শিকার অনেককে উদ্ধারও করতে পেরেছে। একটি মার্কিন প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সাফল্যের কারণে মানবপাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে দুই ধাপ উন্নীত করা হয়েছে। মানবপাচারের কিছু মূল হোতাকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং জানা গেছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক মদদপুষ্ট অথবা তারা নিজেরাই ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ। এ থেকে আরও বোঝা যায় কীভাবে সমাজের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান মানুষরা তাদের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দাসত্বের এই আধুনিক রূপটিকে চালু রেখেছেন। নিঃসন্দেহে, এতে মানব পাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরও জটিল হয়ে গেছে। তারপরেও, কর্তৃপক্ষের উচিত এই অপরাধ দমনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।