দৈ. কি.ডেস্ক : নির্মল হাওয়ায় আনন্দময় সময় কাটানোর জন্য কিশোরগঞ্জের অন্যতম স্পট নরসুন্দা লেকসিটির গুরুদয়াল মুক্তমঞ্চ। শহুরে ক্লান্তি এড়াতে মুক্তমঞ্চের আশপাশের এলাকাজুড়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় থাকে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী দর্শনার্থীর। কিন্তু এলাকার ১০-১২টি কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের কারণে এখন প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে আগত দর্শনার্থীরদের।
৩ নভেম্বর দুপুরে মুক্তমঞ্চ এলাকার ওয়াচটাওয়ারের পাশে একটি বেঞ্চে বসে গল্প করছিল এক যুগল। হঠাৎ ২০-২৫ জনের একটি দল এসে তাঁদের উত্ত্যক্ত করতে থাকে। ওই যুগল প্রতিবাদ করায় হেনস্তার শিকার হয়। সেই সঙ্গে দুজনেরই মোবাইল ফোন, টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেয় ওই গ্যাংয়ের সদস্যরা। আশপাশে অন্য দর্শনার্থীরা থাকলেও কেউ ওই যুগলকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাওয়ার সাহস করেননি।
গত দুই মাসে এ রকম অনেক ঘটনার কথা জানা গেছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। তবে পরে আরও ঝামেলায় পড়তে পারে–এ আশঙ্কায় কেউ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেননি। কেননা ওই তরুণদের ‘বড় ভাইয়েরা’ শহরের ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সরকারি চাকরিজীবীর সন্তান বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ জন্য ভয়ে ওই গ্যাংয়ের কোনো সদস্যের নামও প্রকাশ করতে চাননি তাঁরা।
মুক্তমঞ্চে ঘুরতে আসা অনেক অভিভাবক জানান, শিশুদের খেলাধুলার জন্য যে দোলনা, স্লিপার রয়েছে তাও ঘিরে থাকে ওই গ্যাংয়ের সদস্যরা। বসার বেঞ্চগুলোও দখলে থাকে তাদের। আর তাদের অশ্লীল কথাবার্তার কারণে বাধ্য হয়ে দর্শনার্থীদেরই ফিরে যেতে হয়।
মুক্তমঞ্চের পাশের এক দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তারা ঝাঁক বেঁধে আসে। প্রায়ই খাওয়াদাওয়া করে বিল না দিয়েই চলে যায়। এমনকি বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদাও নেয়। আমরা গরিব মানুষ, কয় টাকা আর রোজগার করতে পারি। তাদের ভয়ে কেউ আইনের আশ্রয় নেওয়ার সাহস পাই না। আমরা এ জুলুম থেকে মুক্তি চাই।’
কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজির শিক্ষক মো. আল আমিন বলেন, কর্তৃপক্ষের উচিত প্রয়োজনীয় স্থানগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা। অন্যথায়, মানুষের শান্তি নষ্ট হবে।
তরুণ গ্যাংয়ের নানা অপরাধের বিষয়ে জেলাজজ আদালতের আইনজীবী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ফয়জুল করিম মবিন বলেন, এটি মারাত্মক ফৌজদারি অপরাধ। প্রশাসন যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমার জানামতে, দুয়েক মাসে মুক্তমঞ্চসহ আশপাশের এলাকায় ছিনতাই হচ্ছে, এমন কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম।’
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, যারা এমন কাজ করছে তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।