নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আগুন দেওয়া হয় নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে। এতে চারজন নিহত হন। তার মধ্যে ছিল ছোট্ট শিশু ইয়াসিন , যাকে বাঁচাতে শেষ চেষ্টা করেছিলেন মা নাদিরা আক্তার পপি। সন্তানকে বুকে আগলে ধরেই আগুনে পুড়ে যান। মরদেহ উদ্ধারের সময় মায়ের কোলেই ছিল ইয়াসিন। উদ্ধারের সময় এমন দৃশ্য নাড়া দেয় সবাইকেই। ট্রেনে অগ্নিসন্ত্রাসের কবলে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের স্মরণে তাই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আগুনে নিহতদের স্মরনে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও মোমবাতি প্রজ্জলনের আয়োজন করা হয়। ''নাশকতার বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ সকল স্তরের জনগণ'' এর ব্যানারে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সাত নম্বর প্লাটফর্মে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ফুল দিয়ে নিহতদের শ্রদ্ধা জানান। অগ্নিসন্ত্রাসের এমন করুণ স্মৃতি তাদেরও শোকার্ত করে তুলে। ফুল দিতে আসা সাধারণ মানুষের চোখে মুখে সেই ক্ষোভ ছিল স্পষ্ট। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল শিশু-কিশোররাও। ছোট্ট শিশু ইয়াসিনের এমন করুণ মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ তারাও। মোমবাতি হাতে তারা নিহতদের স্মরণে সামিল হয়।
মোমবাতি হাতে সমবেত কণ্ঠে সবাই গেয়ে ওঠেন ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পুণ্য করো দহন-দানে’। এরপর নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিভিন্ন ব্যক্তিরা জানান, ট্রেনের মতো নিরাপদ বাহনে যারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। আর যেন কোন শিশু কিংবা কোন প্রাণ নাশকতার আগুনে পুড়ে মারা না যায়। অগ্নিসন্ত্রাসীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা কোনভাবেই রাজনীতির অংশ হতে পারে না।
প্রসঙ্গত, নেত্রকোণা সদরের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন একই পরিবারের সদস্য ও স্বজনসহ ৯ জন। সোমবার রাতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ওঠেন তারা। বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে যান তাদের পাঁচজন। এরপর ট্রেন চলতে শুরু করলে হঠাৎ ধোঁয়ায় ভরে যায় কামরা। ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়। তেজগাঁও স্টেশনে ট্রেন থামতে সবাই হুড়োহুড়ি করে নেমে যান। শুধু চার হতভাগ্য নামতে পারেননি। তাদের মধ্যে ছিলেন নাদিরা আক্তার পপি ও তার তিন বছরের ছেলে ইয়াসিন। আগুনে পুড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তাদের।
পপির দেবর প্রকৌশলী মিনহাজুর রহমান জানান, ‘ভাবির কোলে ছিল ছোট্ট ইয়াসিন। বাচ্চা নিয়ে উনি আর নামতে পারেননি। আগুন নেভানোর পর ওনার লাশ উদ্ধার করা হয়। তখনও তার কোলে ছিল সন্তানের মরদেহ। দুজন একসঙ্গে পুড়ে মারা গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘লাশ দেখে বোঝা যায়, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সন্তানকে বুকে আগলে বাঁচানোর চেষ্টা করেন ভাবি। তবে অনেক লোকের হুড়োহুড়ির মধ্যে পারেননি। সন্তানকে বুকে নিয়েই জীবন্ত পুড়ে মারা যান।’।